তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভার পরিষদীয় দলে যেন চলছে গৃহযুদ্ধ। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়(Kalyan Banerjee) দলেরই এক মহিলা সাংসদকে সম্প্রতি কুকথা বলেছিলেন বলে অভিযোগ। সেই ঘটনার জল গড়িয়েছে অনেক দূর। দাবি করা হচ্ছে, কল্যাণের বাক্যবাণে বিদ্ধ সেই মহিলা সাংসদ হলেন মহুয়া মৈত্র। যদিও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ‘ভার্সেটাইল ইন্টারন্যাশনাল লেডি’ বলে সম্বোধন করছেন। আর এই বিতর্কের মাঝেই নিজের মত প্রকাশ করলে বিজেপির সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের প্রতিনিধিরা দেখা করেছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সেই সময় কল্যাণ-মহুয়া দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সাংবাদিকরা।
প্রাথমিক ভাবে দুই তৃণমূল সাংসদের বিতর্কে মত প্রকাশ করতে চাননি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। পরে সাংসদ হিসেবে দু’জনের তুলনামূলক বিচার করতে বলা হলে মহুয়াকেই এগিয়ে রাখেন অভিজিৎ। এই নিয়ে অভিজিৎ বলেন, ‘সাংসদ হিসেবে লক্ষ্য করেছি, মহুয়া মৈত্র অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সংসদে বক্তব্য রাখেন এবং খুব প্রস্তুতিও নিয়ে আসেন। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে অনেক ভাল, পাণ্ডিত্যপূর্ণ বক্তব্য রাখতে পারেন তিনি।’ উল্লেখ্য, এই বিতর্কে নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে সাংবাদিক সম্মেলন করে কল্যাণ অভিযোগ করেছিলেন, দিল্লিতে তিনি বেশি জনপ্রিয় বলে ‘ইন্টারন্যাশনাল লেডি’ তাঁকে সহ্য করতে পারেন না। ওয়াকফেও দলনেত্রী তাঁকে বক্তব্য দিতে বলেছিলেন, তাঁর জন্যেও নাকি মহুয়ার মনে কল্যাণের প্রতি ‘ঈর্ষা’ থাকতে পারে।
রিপোর্ট অনুযায়ী এই গোটা ঘটনার সূত্রপাত গত ৪ এপ্রিল। সেদিন নির্বাচন কমিশনে প্রতিবাদ কর্মসূচি ছিল তৃণমূলের। সেখানে যোগ দেওয়ার আগে দিল্লিতে তৃণমূলের পার্টি অফিসে গিয়েছিলেন সাংসদরা। সেখানে এক মহিলা সাংসদ দেখেন স্মারকলিপির যেখানে সই করতে হবে সেখানে তাঁর নাম নেই। এরপর তিনি এনিয়ে প্রশ্ন করেন। তারপর হাতে তাঁর নাম লিখে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। এরপর নির্বাচন কমিশনের ভবনের কাছেও তার রেশ চলতে থাকে। দাবি করা হয়, সেই মহিলা সাংসদ নাকি মহুয়া মৈত্র। এদিকে এই সময় অনলাইনের প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে, এক সাংসদের দাবি, নির্বাচন কমিশনে পৌঁছনর পরেও মহুয়াকে লক্ষ্য করে যাচ্ছেতাই ভাষায় মন্তব্য করে যাচ্ছিলেন কল্যাণ। তাতে তৃণমূলের বেশ কয়েকজন সাংসদ তো বটেই, এমনকী নির্বাচন কমিশনের আধিকারিক, সেখানে ডিউটিরত কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরাও নাকি অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলেন। কল্যাণ নাকি ধাক্কাধাক্কি পর্যন্ত করেছিলেন সবার সামনে। সেই সময় মহুয়া নাকি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের বলেন ওঁকে সামলাতে। এমনকী কল্যাণের গ্রেফতারির দাবি তোলেন মহুয়া।
এরপর একাধিক প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় মহুয়ার সমর্থনে কীর্তি আজাদ কল্যাণকে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে লিখেছিলেন, দিদি সবাইকে নিয়ে চলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে তাতে ক্ষান্ত হননি এই প্রবীণ সাংসদ। গ্রুপে কীর্তিকে নানা কটাক্ষ করেন কল্যাণ। এমনকী মহুয়াকে ইন্টারন্যাশানাল গ্রেট লেডি বলেও কটাক্ষ করেন। এমনকী অশালীন নানা মন্তব্য করা হয়েছিল গ্রুপে। এরপরই রাতে মহুয়া হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যান বলে খবর। অন্যদিকে গোটা ঘটনায় শোরগোল পড়েছে তৃণমূলের অন্দরে। এমনকী নেত্রীর কানেও গোটা বিষয়টি গিয়েছে বলে খবর। এদিকে এই সময় অনলাইনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কল্যাণ নাকি ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, দিল্লির পার্টি অফিসে পৌঁছনর পরে ওই মহিলা সাংসদই প্রথমে আমার সঙ্গে অভদ্র আচরণ করেন। অত্যন্ত খারাপ ভাষায় কথা বলেন। তবে এই গোটা পরিস্থিতি নিয়ে এখনও সেই মহুয়ার প্রতিক্রিয়া মেলেনি।