লারসেন অ্যান্ড টুব্রোর চেয়ারম্যান এসএন সুব্রহ্মণ্যনের ‘৯০ ঘণ্টা কাজ’ এবং নারায়ণমূর্তির ‘৭০ ঘণ্টা কাজ’ মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক জারি আছে বিগত বেশ কয়েক মাস ধরেই। এই নিয়ে বেশ কয়েকজন শিল্পপতি নিজেদের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। সামলোচিত হয়েছেন সুব্রহ্মণ্যন এবং নারায়ণমূর্তি। এরই মাঝে এবার ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়লেন মুকেশ আম্বানি(Mukesh Ambani) পুত্র তথা জিও-র চেয়ারম্যান আকাশ আম্বানি। মুম্বই টেক উইকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কাজ এবং জীবনের ভারসাম্য রক্ষার সমীকরণ সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেন তিনি। ড্রিম স্পোর্টসের সিইও হর্ষ জৈনের সাথে কথোপকথনে আকাশ জানান, এই বিষয়ে তাঁর নিজের এক ‘সহজ ফান্ডা’ আছে।
কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবনে ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়ে আকাশ বলেন, ‘আমি খুব ভাগ্যবান যে আমি এমন এক পরিবারে জন্মেছি যেখানে সবাই একে অপরের খুব ঘনিষ্ঠ। আমাদের পরিবারের কাজকে ভারসাম্যের জায়গায় রাখা হয়নি কখনও। আমাদের মূল্যোবোধে জীবনের সবচেয়ে বড় অংশ হল কাজ। ছোট থেকেই দেখেছি, আমা মা-বাবা কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনে ভারসাম্য খোঁজার চেষ্টা করেননি। বরং তাঁরা উভয়কেই সমান প্রাধান্য দিয়েছেন। গত ১০ বছর ধরে রিলায়েন্সে কাজ করে আমি এই বিষয়টির সঙ্গে আত্মস্থ হয়েছি। তাই আমার কাছে এই ভারসাম্যের প্রশ্নটা আসে না। আমার কাছে দুটোই অগ্রাধিকার পায়। আর আমার মনে হয় এই সহজ ফান্ডাটা সবার গ্রহণ করা উচিত… জীবনে কোন জিনিসটাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, তা ঠিক করে নেওা উচিত। তবে বয়সের সাথে সাথে সেই অগ্রাধিকার বদলাবে। তবে এটা দেখতে হবে, যে জিনিসটাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন, তা যেন আপনার জীবনে অর্থপূর্ণ হয়।’
এদিকে আকাশ আম্বানিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে তিনি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করতে পছন্দ করবেন নাকি বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কাজ করতে চাইবেন। এই প্রশ্নের জবাবে আকাশ বলেন, ‘অধিকাংশ দিনই আমার ১২ ঘণ্টারও বেশি কাজ থাকে। আমার সেই ব্যস্ততা বোঝার জন্যে স্ত্রী স্লোকাকে ধন্যবাদ।’
উল্লেখ্য, সম্প্রতি কর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সাক্ষাৎ চলাকালীন সুব্রহ্মণ্যনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন লারসেন অ্য়ান্ড টুব্রোর মতো মাল্টি-বিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি সংস্থা এখনও কর্মীদের শনিবার কাজ করাচ্ছে? তার জবাবে সুব্রহ্মণ্যন নাকি বলেছিলেন, ‘আমার এটা ভেবে অনুশোচনা হচ্ছে যে আমি আপনাদের দিয়ে রবিবারও কাজ করাতে পারছি না। আমি যদি আপনাদের দিয়ে রবিবারও কাজ করাতে পারতাম, তাহলে আমি খুশি হতাম। কারণ, আমি রবিবার কাজ করি। বাড়িতে বসে আপনারা কী করবেন? কতক্ষণ নিজের বউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকবেন? ধুর, অফিসে চলে যান। কাজ করুন।’ এরপরই সুব্রহ্মণ্যন তাঁর এক অভিজ্ঞতা কর্মীদের সঙ্গে শেয়ার করে বলেন, ‘একবার এক চিনা ব্যক্তির সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। তিনি দাবি করেছিলেন, চিন অনায়াসেই আমেরিকাকে হারিয়ে দিতে পারে। কারণ, চিনারা সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজ করেন। সেখানে মার্কিনিরা সপ্তাহে মাত্র ৫০ ঘণ্টা কাজ করেন। তাই আপনাকে যদি বিশ্বের সেরা হতে হয়, তাহলে প্রত্যেক সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা করে কাজ করতেই হবে। আপনারা সেটা শুরু করে দিন।’ পরে সুব্রহ্মণ্যনের এই মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই বিতর্কের ঝড় ওঠে। এবং অনেক শিল্পপতি এই নিয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেন।
পরে এই বিতর্ক নিয়ে লারসেন অ্য়ান্ড টুব্রোর হিউম্যান রিসোর্স প্রধান সোনিকা মুরলীধরন দাবি করেন, সংস্থার চেয়ারম্যানের মন্তব্যের পুরোপুরি ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। ওই মন্তব্যের আগে কী বলেছেন, পরে কী বলেছেন, সেইসব বিবেচনা না করেই তাঁকে নিয়ে অহেতুক সমালোচনা করা হচ্ছে। কখনওই সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজের ‘নিদান’ দেননি বা ঘুরিয়েও সেটা বলতে চাননি। একেবারে হালকা চালে সুব্রহ্মণ্যন সেই মন্তব্য করেছিলেন বলে দাবি করেছেন সোনিকা। সোনিকার কথায়, ‘উনি প্রত্যেক কর্মীকে নিজের বর্ধিত পরিবারের অংশ হিসেবে বিবেচনা করেন। একতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বোধ জাগিয়ে তোলেন, যা আজকের কর্পোরেট দুনিয়ায় বিরল।’ তবে তাতেও বিতর্ক থামার নাম নেই।