বাঙালি সমাজে সরস্বতী বিদ্যার দেবী,জ্ঞানের দেবী। আট থেকে আশি ভক্তিভরে মাতৃবন্দনায় মেতে ওঠে মাঘ মাসের শুক্লাপঞ্চমী তিথি-তে। এই বছর দু-দিন ধরে বাণীবন্দনায় ব্রতী বাংলা। কিন্তু আচমকাই ‘বামপন্থী’ অভিনেতা অম্বরীশের মন্তব্যে শোরগোল সোশ্যাল মিডিয়ায়।
রবিবার সরস্বতী পুজোর দিন এক সংবাদমাধ্যমে লেখা কলমে অভিনেতা দাবি করেন, পুরাণ মতে সরস্বতী নাকি কামেরও দেবী। সেই দাবি ঘিরেই বিতর্ক তুঙ্গে। সরস্বতী পুজো মানেই বাঙালির প্রেম দিবস। কিন্তু তা বলে মা সরস্বতীকে সরাসরি ‘কামের দেবী’ বলে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন অম্বরীশ। এই নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি। অম্বরীশের মন্তব্য সরাসরি হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হেনেছে জানান তিনি। অবিলম্বে ক্ষমা না চাইলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন।
অম্বরীশের সেই মন্তব্যের স্ক্রিনশট পোস্ট করে এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, ‘আমাদের সমাজে ধর্ম ও দেব-দেবীদের প্রতি শ্রদ্ধা একটি ঐতিহ্যবাহী এবং সংবেদনশীল বিষয়। দেবী সরস্বতী শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মের নয়, ভারতীয় সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি জ্ঞান, বিদ্যা, সঙ্গীত ও শিল্পকলার দেবী হিসেবে সম্মানিত। পুরাণে বা শাস্ত্রগ্রন্থে সরস্বতীকে কামের দেবী হিসেবে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি।
অম্বরীশ ভট্টাচার্যের মতো বামপন্থী অভিনেতারা নিজেদের মতামত বা ব্যঙ্গাত্মক দৃষ্টিকোণ থেকে দেব-দেবীদের নিয়ে মন্তব্য করতে পারেন। কিন্তু তা যেন অপমানজনক ও বিভ্রান্তিকর না হয়। ধর্মীয় বিশ্বাসকে আঘাত করা বা অবমাননাকরভাবে উপস্থাপন করা শিল্পের নামে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি স্পষ্ট যে, দেবী সরস্বতীকে বিদ্যা ও জ্ঞানের দেবী হিসেবে উপস্থাপন করাই হিন্দু পুরাণ ও ধর্মগ্রন্থের মূল বার্তা। অম্বরীশ ভট্টাচার্যের মন্তব্য একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার সামিল। আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, কিন্তু সেই স্বাধীনতা যেন কারও ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হানার মাধ্যম না হয়। এই ধরনের মন্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং যদি লেখক ক্ষমা না চায় এই মন্তব্যের জন্য তাহলে আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব’।
অম্বরীশ ওই কলমে নিজেই জানিয়েছে বামপন্থী পরিবারে বেড়ে ওঠায় কখনও সরস্বতী পুজোয় অঞ্জলি দেননি তিনি। বরং তাঁর মাথায় সারাক্ষণ ছিল ‘দুষ্ট সরস্বতী’র বাস! তিনি আরও লিখেছেন, সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা। অম্বরীশ বলেন, ‘অর্ধেক জীবন’ পড়ে জেনেছিলাম, সুনীলের প্রথম চুম্বন বাগদেবীকে। ওঁর সেই রোম্যান্টিক ভাবনা আমার বেশ লেগেছিল।’
বিতর্ক মাথাচাড়া দিতেই ‘সরস্বতী কামের দেবী’ এই অংশটুকু বাদ পড়ে ওই বিতর্কিত আর্টিকেল থেকে। তবে এই নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাননি অম্বরীশ।