Anubrata Mondal। সময়ের স্রোতে ফিকে অনুব্রতর দাপট

Spread the love

বীরভূম নাকি কেষ্টভূম? আসলে, একটা সময় ছিল, যখন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের(Anubrata Mondal) নামে গোটা বীরভূম জেলায় ‘বাঘে-গরুতে নাকি এক ঘাটে জল খেত’! সেই দিন কি তবে বদলে গেল?

এই প্রসঙ্গ উঠছেই। কারণ, তিহাড় জেলে দীর্ঘ সময় কাটানোর পর জামিনে মুক্ত হয়েছেন বীরভূমের কেষ্ট। যিনি কিনা স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশীর্বাদধন্য এবং ভরসার পাত্র হিসাবেই বরাবর পরিচিত।

এহেন কেষ্ট জেল থেকে ‘মুক্ত’ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম সাংবাদিক সম্মেলন করেন। এই সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর আচরণ, কথাবার্তা এবং সেইসঙ্গে সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনার প্রবাহ রাজনৈতিক মহলের নজর কেড়েছে।

প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সেসবের বিশ্লেষণও শুরু হয়ে গিয়েছে । আর তা থেকেই বীরভূমে কেষ্টর প্রতিপত্তি এবং দলনেত্রীর সঙ্গে তাঁর স্নেহ-শ্রদ্ধার সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।

উল্লেখ্য, গরুপাচার কাণ্ডে অনুব্রত মণ্ডল এবং পরবর্তীতে তাঁর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল গ্রেফতার ও কারাবন্দি হওয়া সত্ত্বেও আগাগোড়া কেষ্টর পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেটা, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার ও কারাবন্দি হওয়ার পর তাঁকে করতে দেখা যায়নি!

এদিকে, দীর্ঘদিন অনুব্রত মণ্ডল কারাবন্দি থাকা সত্ত্বেও তাঁকে বীরভূমে দলের জেলা সভাপতি পদ থেকে সরাননি মমতা। বদলে তৈরি করে দিয়েছিলেন নতুন কোর কমিটি।

প্রশ্ন উঠেছিল, কেষ্টর অনুপস্থিতিতে এই কোর কমিটি কি বীরভূমে সংগঠন ধরে রাখতে পারবে? এনে দিতে পারবে কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনী সাফল্য? তথ্য বলছে, দু’টি দায়িত্বই যথাযথভাবে পালন করতে সক্ষম হয়েছেন সংশ্লিষ্ট কোর কমিটির সদস্যরা।

অনুব্রত না থাকাকালীন একটি নয়, বরং দু’টি অগ্নিপরীক্ষা হয়েছিল। প্রথমে পঞ্চায়েত নির্বাচন, পরে লোকসভা নির্বাচন। দু’টিতেই ভালো ফল করতে সফল হয়েছে কেষ্টহীন জেলা সংগঠন।

স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের দাবি, অনুব্রতর দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে বীরভূমে দলের সংগঠনে প্রভাব বাড়ে কাজল শেখের। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, অনুব্রত স্বভূমে ফিরতেই এই কাজল শেখ বেশ কিছু গরম-গরম মন্তব্য করেছেন। যদিও তাঁর বক্তব্য, দাদার (অনুব্রত মণ্ডল) উদ্দেশে কোনও কথা বলেননি তিনি।

অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সর্বশেষ বীরভূম সফরে স্নেহের কেষ্টকে নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। বৃহস্পতিবারের সাংবাদিক সম্মেলনে অনুব্রতও সরাসরি মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়কে নিয়ে কোনও প্রশ্নর উত্তর দিতে চাননি। বরং, জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন।

যদিও দুর্গাপুজো-কালীপুজোর পর তিনি যে আবার জেলায় দলের সংগঠনের কাজে যোগ দেবেন, সেই বার্তা দিয়েছেন অনুব্রত। দাবি করেছেন, সকলকে নিয়ে চলবেন।

অথচ, তাঁর অনুপস্থিতিতে দলের জেলা কার্যালয়ে কোর কমিটির সদস্যদের যে ছবি টাঙানো ছিল, অনুব্রত ফিরতেই সেই ছবি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বদলে, সেই জায়গাতেই ফিরেছে জেলা সভাপতির ছবি। পরবর্তীতে সেই কার্যালয়ে বসেই সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন অনুব্রত।

প্রশ্ন উঠছে, এমন একটা প্রেক্ষাপটে আদৌ কি বীরভূমে তৃণমূলের সংগঠন আগের মতোই অনুব্রতর নেতৃত্বে জোটবদ্ধভাবে চলবে? নাকি তৈরি হবে অন্য কোনও রসায়ন?

এদিকে, কিছুদিনের মধ্যেই কলকাতায় ডাক্তার দেখাতে আসার কথা রয়েছে অনুব্রত মণ্ডলের। সেই সময় কি কালীঘাটে দলনেত্রীর বাড়ি যাবেন তিনি? নাকি অন্য কোথাও হবে সাক্ষাৎ? এই প্রসঙ্গেরও কোনও স্পষ্ট উত্তর দেননি দিদির স্নেহের কেষ্ট!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *