হাসিনার নির্দেশের পরও আন্দোলনকারীদের রুখতে পথে নামতে অস্বীকার করেছিল সেনা। পরে সেনা ‘সেফ প্যাসেজ’ দিয়ে হাসিনাকে বাংলাদেশ ছাড়তে দেয়। প্রাথমিক ভাবে দেশের নিয়ন্ত্রণ নেয় সেনা। পরে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে সাহায্য করেছিল বাংলাদেশ সেনা। এই ধারাবাহিকতায় বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে এবার নিজেই দাবি করলেন রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক। বিবিসির ‘হার্ডটক’ অনুষ্ঠানে ফলকার এই দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘ছাত্র এবং সাধারণ জনতার আন্দোলন দমনে যাতে সেনা অংশ না নেয়, তার জন্যে সতর্ক করেছিলাম। এরপরই সরকার পরিবর্তন হয়েছিল সেখানে।’
ফলকারের কথায়, ‘বাংলাদেশে গতবছর জুলাই ও অগস্টে ছাত্রদের ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। তখন শেখ হাসিনার সরকার আমলে ছাত্রদের আন্দোলন দমনে ব্যাপক নিপীড়ন চলছিল। আমরা (রাষ্ট্রসংঘ) তখন কী বলি, সেটার দিকেই আশা নিয়ে তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশিরা। তখন আমরা সেনাবাহিনীকে সতর্ক করে দিয়েছিলাম। আমরা বলেছিলাম, যদি বাংলাদেশি সেনা এই আন্দোলন দমনে নামে, তাহলে তারা আর রাষ্ট্রসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর অংশ থাকতে পারবে না। এরপরই আমরা পরিবর্তন দেখলাম বাংলাদেশে।’
এরপর বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের সময়কাল নিয়ে প্রতিবেদন পেশ প্রসঙ্গে ফলকার বলেন, ‘যখন ইউনুস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিলেন, তখন তিনি আমাকে তাৎক্ষণিকভাবে বলেন, আমি যাতে সেখানে একটি অনুসন্ধানী দল পাঠাই। বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর গুরুত্ব দিতে অনুরোধ করেছিলেন তিনি। সেখানে যা ঘটেছিল, তার তদন্ত করতে বলেন। আমরা তাই করেছিলাম। আমি গত বছর বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। আমরা বাংলাদেশ নিয়ে একটি অবস্থান গ্রহণ করেছিলাম। আমরা সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছিলাম। আন্দোলনকারীদের সহযোগিতা করায় বাংলাদেশি ছাত্ররা আমাদের প্রতি খুব কৃতজ্ঞ ছিল।’
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ অগস্ট বাংলাদেশ ত্যাগ করেছিলেন শেখ হাসিনা। সেদিন বাংলাদেশি প্রধানন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে উন্মত্ত জনতার উল্লাস দেখা গিয়েছিল। শেখ হাসিনার অন্তর্বাস থেকে বাসভবনের চেয়ার, টেবিল, বেসিন চুরি করতে দেখা গিয়েছিল আন্দোলনকারীদের। এদিকে বাংলাদেশ সেনা শেখ হাসিনাকে দেশ ত্যাগ করার পথ করে দিয়েছিল। তবে এর আগে শেখ হাসিনা সেনা নামানোর হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেও তাঁর কথা মতো সেনা রাস্তায় নেমে আন্দোলন দমনে অংশ নেয়নি। আর সেনা তাঁর কথা না সোনার পরই হাসিনাকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল।