কয়েকদিন আগেই ব্যাঙ্ককে মহম্মদ ইউনুসকে মিষ্টি ভাষায় কড়া বার্তা দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বাংলাদেশি প্রধান উপদেষ্টাকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বুঝিয়েছিলেন, এমন কোনও উস্কানিমূলক মন্তব্য যেন বাংলাদেশ থেকে উঠে না যাতে দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি ঘটে। তবে মোদীর সেই কথা মনে হয় বাংলাদেশি নেতাদের এক কান দিয়ে ঢুকে অন্য কান দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে; বা কানেই ঢোকেনি কথা। এই আবহে এবার নরেন্দ্র মোদীকে ‘ছুড়ে ফেলে’ দেওয়ার কথা বললেন এনসিপি নেতা সারজিস আলম।
হাসিনা বিরোধী আন্দোলন থেকে উঠে আসা এই যুবনেতা বিগত দিনে বিভিন্ন উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন। এমনকী ইসকনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির দাবিও তুলেছিলেন। সেই সারজিস এবার এক ফেসবুক পোস্ট করে লেখেন, ‘ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সম্মতিক্রমে ওয়াকফ বিলটি আইনে পরিণত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ভারতে আরেকটি কালো আইন তৈরি হল। উগ্র সম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদী নিজেকে আরও উগ্র সম্প্রদায়িক হিসেবে প্রমাণ করল এবং রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের অবস্থান আরও প্রশ্নবিদ্ধ করল। গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ এবং সব জাতির বসবাস উপযোগী রাষ্ট্র হিসেবে ভারতকে এগিয়ে নিতে হলে মোদীর মতো উগ্র সাম্প্রদায়িক নেতাকে পেছনে ছুড়ে ফেলার বিকল্প নেই।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ওয়াকফ বিরোধিতায় ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে বিএনপি, জামাতে ইসলামির মতো দলগুলি। এছাড়াও মুসলিম সংগঠনগুলিও এই আইনের বিরোধিতায় সরব। গত ৬ এপ্রিল বাংলাদেশের হেফাজতে ইসলামির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। এরপর হেফাজত নেতাদের সঙ্গে নিয়েই সাংবাদির সম্মেলন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। সেখানেই তিনি বলেন, ‘আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে ভারত সরকার পুনর্বিবেচনা করবে বলে আশা প্রকাশ করছে বিএনপি।’ প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার নিয়ে মহম্মদ ইউনুসকে ‘কথা শোনান’ নরেন্দ্র মোদী। এদিকে যেদিন ব্যাঙ্ককে মোদী-ইউনুস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, সেদিন প্রায় ভোরেই রাজ্যসভাতে পাশ হয়েছিল ওয়াকফ সংশোধনী বিল। তবে নিজেদের দেশ নিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখে এবার সেই ওয়াকফ বিল নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছে বাংলাদেশের দলগুলি। এর আগে এই নিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আপত্তি জানিয়েছিল। এরই সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে ভারতীয় মুসলমানদের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানায় খেলাফত মজলিস। এদিকে ভারতের সংসদে ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাশ হতেই এর নিন্দায় সরব হয় বাংলাদেশের জামাতে ইসলামির ছাত্র সংগঠন। এই নিয়ে একটি বিবৃতি জারি করে ছাত্রশিবির। জামাতে ইসলামিও পথে নেমেছে ওয়কফ সংশোধনীর বিরুদ্ধে।
প্রসঙ্গত, লোকসভার এবং রাজ্যসভাতে পাশ হয়েছে ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল। রাজ্যসভায় এই বিলটি পাশ করাতে বিজেপির প্রয়োজন ছিল ১১৯টি ভোটের। তারা সেই সংখ্যা থেকে বেশ কিছুটা বেশি ভোটই পায়। ৩৩ ভোটের ব্যবধানে বিলটি পাশ হয় সংসদের উচ্চকক্ষে। এর পক্ষে পড়েছিল ১২৮টি ভোট, বিপক্ষে পড়ে ৯৫টি ভোট। এর আগে লোকসভায় এই বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ২৮৮ জন সাংসদ, বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ২৩২ জন সাংসদ। আর ৪ এপ্রিল রাতে রাষ্ট্রপতি এই বিলে সই করেন। এই আবহে এটি এখন আইনে পরিণত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ওয়াকফের অধীনে ভারতে মোট ৮.৭ লক্ষ সম্পত্তি আছে। ৯.৪ লক্ষ একর জমি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে ওয়াকফ। যার আনুমানিক মূল্য ১.২ লক্ষ কোটি টাকা। দেশে সবচেয়ে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি আছে উত্তরপ্রদেশে (২,৩২,৫৪৭, দেশের মোট ওয়াকফ সম্পত্তির ২৭ শতাংশ)। তারপরই তালিকায় আছে পশ্চিমবঙ্গ। রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে মোট ৮০ হাজার ৫৪৮টি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। বাংলায় ওয়াকফ সম্পত্তির ওপরে রয়েছে ১৫৮টি স্কুল, ৪টি মডেল ইংলিশ মিডিয়াম মাদ্রাসা, ১৯টি মুসলিম হস্টেল, ৯টি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বীরভূমে ওয়াকফের জমির ওপরে রয়েছে একটি শপিং কমপ্লেক্সও। তবে এত সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও ভারতে ওয়াকফের বার্ষিক আয় নাকি মাত্র ১৬৩ কোটি টাকা। এই আবহে বিজেপি ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনায় গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে। এই আবহে ওয়াকফ পরিচালনায় স্বচ্ছতা আনতেই নাকি এই সংশোধনী আইন আনা হয়েছে।