পাকিস্তানের থেকে প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকার (বাংলাদেশি মুদ্রায়) ক্ষতিপূরণ চাইল বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার ঢাকায় পাকিস্তানের বিদেশ সচিব আমনা বালুচের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পরে মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদেশ সচিব জসিমউদ্দিন জানিয়েছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের আগের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। একটি হিসাব অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের অঙ্কটা হল ৪০০ কোটি ডলার। অপর একটি হিসাব অনুযায়ী আবার পাকিস্তানের থেকে প্রাপ্ত ক্ষতিপূরণের অঙ্কটা ৪৩২ কোটি ডলারে ঠেকেছে। যে অঙ্কটা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা। আর ভারতীয় মুদ্রায় সেই অঙ্কটা ৩৭ হাজার কোটি টাকার মতো হবে।
পাকিস্তানকে কোন কোন শর্ত দিল বাংলাদেশ?
তবে শুধুমাত্র সেই ক্ষতিপূরণ নয়, বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চাইলে পাকিস্তানকে যে আরও একাধিক শর্তপূরণ করতে হবে, সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে ঢাকা। বিদেশ সচিব জসিমউদ্দিন জানিয়েছেন, শৈত্য কাটিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান। কিন্তু ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাইলে এবং সম্পদ ফেরত না দিলে দু’দেশের সম্পর্ক যে শক্ত ভিত্তির উপরে দাঁড়াবে না, তাও স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন জসিমউদ্দিন।
বাংলাদেশের বিদেশ সচিবের কথায়, ‘অমীমাংসিত ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেমন – আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, অবিভক্ত সম্পদের বণ্টন, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রাপ্ত বৈদেশিক সাহায্যের অর্থ হস্তান্তর এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি তৎকালীন সামরিক বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার (বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে)।’
পাকিস্তানকে নিজের ইশারায় নাচাতে চাইছে বাংলাদেশ?
সেইসঙ্গে বাংলাদেশের বিদেশ সচিব জানিয়েছেন, সেই ‘অমীমাংসিত ঐতিহাসিক বিষয়গুলি’ দ্রুত সমাধানের মাধ্যমে কল্যাণমুখী সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যদিও সেই বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের বিদেশ সচিব শুধুমাত্র জানিয়েছেন যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা খুব ভালো হয়েছে। ‘অমীমাংসিত ঐতিহাসিক বিষয়গুলি’ নিয়ে কী করা হবে, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
আর বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে বিদেশ সচিব পর্যায়ের সেই আলোচনার পরে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, ঢাকা স্পষ্টভাবে বার্তা দিয়েছে যে তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চাইলে ইসলামাবাদকে ‘অমীমাংসিত ঐতিহাসিক বিষয়গুলি’-র সমাধান করতে হবে। অর্থাৎ ভালো সম্পর্কের জন্য ইসলামাবাদকে শুনতে হবে ঢাকার কথা।
বাংলাদেশ-পাকিস্তানের বৈঠক নিয়ে কী বলছে ভারত?
তারইমধ্যে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনার প্রেক্ষিতে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, বিষয়টির উপর নজর রেখেছে নয়াদিল্লি।