ভারতের সংসদে ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাশ হতেই এর নিন্দায় সরব বাংলাদেশের জামাতে ইসলামির ছাত্র সংগঠন। এই নিয়ে একটি বিবৃতি জারি করেছে ছাত্রশিবির। তাতে বলা হয়েছে, ‘মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা, মালিকানা ও অধিকার হরণে বিজেপি সরকারের সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টার দৃষ্টান্ত এই ওয়াকফ সংশোধনী বিল। এই আইনের মাধ্যমে মুসলিমদের দান করা সম্পত্তিতে সরকারি হস্তক্ষেপ ও দখলের পথ তৈরি করা হয়েছে।’ এই আইনকে ‘মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি আরও একটি আঘাত’ আখ্যা দিয়ে ছাত্রশিবিরের তরফ থেকে বলা হয়, ‘মুসলিমদের ওপর একের পর এক দমনমূলক আইন চাপিয়ে দিয়ে ভারতের শাসকগোষ্ঠী দেশটিকে একক হিন্দু রাষ্ট্রে রূপান্তরের চেষ্টা চালাচ্ছে।’
উল্লেখ্য, এই ওয়াকফ সংশোধনী বিলটি প্রথমে জেপিসিতে পাঠানো হয়েছিল। যৌথ সংসদীয় কমিটিতে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা হয় এটি নিয়ে। এরপর এখন ফের এটি সংসদে উপস্থাপিত হয়। লোকসভা এবং রাজ্যসভায় বিলটি পাশ হয়েছে। শাসক দল বলছে, মুসলিমদের স্বার্থেই এই ওয়াকফ সংশোধনী বিল আনা হচ্ছে। বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, এই বিলে সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা আল্লাহর নামে নিজেদের সম্পত্তি উৎসর্গ করতে পারেন। তখন তা ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। এরপর সেই জমি হস্তান্তর বা বিক্রি করা যায় না। সেই সম্পত্তি থেকে যে উপার্জন হয়, তা মুসলিম সমাজের উন্নয়নের জন্যে ব্যবহার করার কথা।
প্রসঙ্গত, লোকসভার পাশাপাশি রাজ্যসভাতেও পাশ হয় ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল। গত ৩ এপ্রিল বিলটি পেশ করা হয়েছিল সংসদের উচ্চকক্ষে। সেখানেও প্রায় ১২ ঘণ্টা আলোচনা হয় এই বিলটি নিয়ে। এরপর তা অনুমোদিত হয় রাজ্যসভাতেও। বিলটির পক্ষে ১২৮টি এবং বিপক্ষে ৯৫টি ভোট পড়ে উচ্চকক্ষে। রাত ২টো ৩৪ মিনিটে এই ভোটাভুটির ফল ঘোষিত হয়। উল্লেখ্য, ওয়াকফ সম্পত্তির প্রশাসন ও পরিচালনার উন্নতির লক্ষ্যে মোদী সরকার এই বিলটি এনেছিল বলে দাবি শাসকপক্ষের। এই আবহে গতকাল রাত ১২টা ৫৫ নাগাদ ওয়াকফ সংশোধনী নিয়ে বিতর্কের উপরে জবাবি ভাষণ দেওয়া শুরু করেন সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। তারপর রাত ১টা ১১ মিনিটে রিজিজুর জবাবি ভাষণ শেষ হয়। এরপর উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ধনখড় বিল পাশের বিষয়টি বিবেচনার জন্য ধ্বনিভোটের মাধ্যমে সম্মতি চান। ধ্বনিভোটে সরকার পক্ষকে জয়ী ঘোষণা করেন তিনি। তবে বিপক্ষ ডিভিশনের (ভোটাভুটি) দাবি জানায়। এরপর ভোটাভুটি শুরু হয় রাজ্যসভায়। এই বিলটি পাশ করাতে বিজেপির প্রয়োজন ছিল ১১৯টি ভোটের। তারা সেই সংখ্যা থেকে বেশ কিছুটা বেশি ভোটই পায়। ৩৩ ভোটের ব্যবধানে বিলটি পাশ হয় সংসদের উচ্চকক্ষে। এর আগে লোকসভায় এই বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ২৮৮ জন সাংসদ, বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ২৩২ জন সাংসদ। এখন যেহেতু বিলটি লোকসভার পাশাপাশি রাজ্যসভাতেও পাস হয়েছে, এবার রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে বিলটি আইনে পরিণত হবে।
ওয়াকফের অধীনে ভারতে মোট ৮.৭ লক্ষ সম্পত্তি আছে। ৯.৪ লক্ষ একর জমি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে ওয়াকফ। যার আনুমানিক মূল্য ১.২ লক্ষ কোটি টাকা। দেশে সবচেয়ে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি আছে উত্তরপ্রদেশে (২,৩২,৫৪৭, দেশের মোট ওয়াকফ সম্পত্তির ২৭ শতাংশ)। তারপরই তালিকায় আছে পশ্চিমবঙ্গ। রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে মোট ৮০ হাজার ৫৪৮টি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। বাংলায় ওয়াকফ সম্পত্তির ওপরে রয়েছে ১৫৮টি স্কুল, ৪টি মডেল ইংলিশ মিডিয়াম মাদ্রাসা, ১৯টি মুসলিম হস্টেল, ৯টি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বীরভূমে ওয়াকফের জমির ওপরে রয়েছে একটি শপিং কমপ্লেক্সও।