এর আগে সিএএ-র সময় দেখা গিয়েছিল মুর্শিদাবাদে রেল অবরোধ করে প্রতিবাদ দেখানো হয়েছিল। আর এবার ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধেও একই ভাবে প্রতিবাদে নামলেন অনেকে। বিজেপির অভিযোগ, ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতার নামে রেললাইনে নেমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিষেবা ব্যাহত করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের নিমতিতা স্টেশনে। এদিকে এই ঘটনার জেরে যাত্রী সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিজেপির মুখপাত্র কেয়া ঘোষ। এদিকে কেয়া ঘোষ সরাসরি এই ঘটনার জন্যে আঙুল তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। তাঁর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর উস্কানিমূলক মন্তব্যের জেরেই এহেন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, যদিও এই ধরনের কোনও প্রতিবাদ ঘটনার জেরে কোনও যাত্রীর ক্ষতি হয়, তাহলে এর দায় পুরোপুরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হবে।
এই রেললাইন অবরোধের দু’টি ভিডিয়ো কেয়া ঘোষ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। তার মধ্যে একটি ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, দিনের আলো তখনও আছে। উত্তেজিত একদল জনতা রীতিমতে রেললাইনে দাপাদাপি করছেন। কার্যত রেললাইনের ‘দখল’ নিয়ে তারা পরিষেবা ব্যাহত করছেন। এদিকে অপর একটি ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, অন্ধকার নেমেছে। রেললাইনের ওপরে মানুষের ঢল। সেখান দিয়ে কোনও ট্রেন যাওয়ার কোনও উপায় নেই। বিক্ষোভকারী জনতা নানান স্লোগান তুলছেন। সঙ্গে ভারতীয় পাকা নাড়াচ্ছেন কেউ একজন।
এদিকে নিজের পোস্টে নিমতিতা স্টেশনকে মালদা বলে উল্লেখ করেন কেয়া ঘোষ। উল্লেখ্য, নিমতিতা মুর্শিদাবাদে অবস্থিত হলেও কেয়া ঘোষ উল্লেখ করেন, সেই স্টেশনটি মালদায় অবস্থিত। এদিকে নিজের পোস্টে কেয়া লেখেন, ‘মালদার (মুর্শিদাবাদ হবে) নিমতিতা স্টেশনে ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা এলাকাটি অবরোধ করে রেখেছে। ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দিচ্ছে এবং ট্রেন চলাচলে বাধা দিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উস্কানিমূলক মন্তব্যের ফলে রাজ্যের বেশ কয়েকটি অংশে ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। জননিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে এই ঘটনা। তবে এটিই প্রথম নয়। সিএএ বিরোধী বিক্ষোভের কথা মনে আছে? যেখানে ট্রেনগুলিতে পাথর ছুড়ে মারা হয়েছিল এবং বেশ কয়েকজন যাত্রী গুরুতর ভাবে জখম হয়েছিল। যদি যাত্রীদের কোনও ক্ষতি হয় বা সাধারণ জনগণ আবারও ভোগান্তিতে পড়েন, তাহলে সম্পূর্ণ দায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর বর্তাবে।’
এদিকে তিনি নিজের পোস্টে ‘জেলা গুলিয়ে’ ফেলায় নীচে কমেন্টে অনেকেই সেই ভুল ধরিয়ে দেন। অপরদিকে বঙ্গ বিজেপির তরফ থেকেও এই সক্রান্ত একটি পোস্ট করা হয়। সেখানেও জেলা নিয়ে ‘ভুল’ ছিল। নিমতিতাকে মালদার স্টেশন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে সেই পোস্টেও দাবি করা হয়েছে, এই বিক্ষোভ প্রতিবাদে কোনও রেলযাত্রীর কোনও ক্ষতি হলে তার দায় মমতা বন্দ্যোপধ্যায়ের।
প্রসঙ্গত, লোকসভার এবং রাজ্যসভাতে পাশ হয়েছে ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল। রাজ্যসভায় এই বিলটি পাশ করাতে বিজেপির প্রয়োজন ছিল ১১৯টি ভোটের। তারা সেই সংখ্যা থেকে বেশ কিছুটা বেশি ভোটই পায়। ৩৩ ভোটের ব্যবধানে বিলটি পাশ হয় সংসদের উচ্চকক্ষে। এর পক্ষে পড়েছিল ১২৮টি ভোট, বিপক্ষে পড়ে ৯৫টি ভোট। এর আগে লোকসভায় এই বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ২৮৮ জন সাংসদ, বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ২৩২ জন সাংসদ। আর ৪ এপ্রিল রাতে রাষ্ট্রপতি এই বিলে সই করেন। এই আবহে এটি এখন আইনে পরিণত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ওয়াকফের অধীনে ভারতে মোট ৮.৭ লক্ষ সম্পত্তি আছে। ৯.৪ লক্ষ একর জমি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে ওয়াকফ। যার আনুমানিক মূল্য ১.২ লক্ষ কোটি টাকা। দেশে সবচেয়ে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি আছে উত্তরপ্রদেশে (২,৩২,৫৪৭, দেশের মোট ওয়াকফ সম্পত্তির ২৭ শতাংশ)। তারপরই তালিকায় আছে পশ্চিমবঙ্গ। রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে মোট ৮০ হাজার ৫৪৮টি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। বাংলায় ওয়াকফ সম্পত্তির ওপরে রয়েছে ১৫৮টি স্কুল, ৪টি মডেল ইংলিশ মিডিয়াম মাদ্রাসা, ১৯টি মুসলিম হস্টেল, ৯টি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বীরভূমে ওয়াকফের জমির ওপরে রয়েছে একটি শপিং কমপ্লেক্সও। তবে এত সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও ভারতে ওয়াকফের বার্ষিক আয় নাকি মাত্র ১৬৩ কোটি টাকা। এই আবহে বিজেপি ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনায় গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে। এই আবহে ওয়াকফ পরিচালনায় স্বচ্ছতা আনতেই নাকি এই সংশোধনী আইন আনা হয়েছে।