কিছুদিন আগেই একটি বিরল সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে কেরালার এক পাঁচ বছরে শিশু কন্যার মৃত্যু হয়। এবার ওই একই ঘটনা ঘটে গেল পাকিস্তানের করাচিতে। আওরঙ্গজেব নামের এক ২২ বছর বয়সী ব্যক্তির মৃত্যু হল ব্রেন ইটিং অ্যামিবা অথবা মস্তিষ্ক খাওয়া অ্যামিবার আক্রমণে। চিকিৎসার ভাষায় যাকে বলা হয় প্রাইমারী অ্যামিবিক মেনিনগোয়েনসেফালাইটিস ওরফে PAM।
PAM কী?
এটি একটি স্নায়ুতন্ত্রের রোগ, যা নাক দিয়ে সোজা মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যায়। গরম জলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস। রিপোর্ট অনুযায়ী, এটি নাক দিয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে তারপর মস্তিষ্কে পৌঁছয়। মস্তিষ্কে পৌঁছানোর পর ধীরে ধীরে মস্তিষ্ককের টিস্যুগুলিকে ধ্বংস করতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত আক্রান্তের মৃত্যু হয়। সাধারণত সাঁতার কাটার সময় নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে এই অ্যামিবা।
প্রাথমিক পর্যায়ে এই অ্যামিবায় আক্রান্ত হওয়ার পর মাথা ব্যথা, জ্বর, বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়। সমস্যা গুরুতর হলে খিচুনি, বিভ্রান্তি বা হ্যালুসিয়েশনও হতে পারে। অনেক সময় রোগীর ঘাড় শক্ত হয়ে যায়, রোগী কোমাতেও চলে যেতে পারে। মূলত এই রোগের লক্ষণ শুরু হওয়ার ৫ দিনের মধ্যে রোগী কোমায় চলে যায় এবং ১ থেকে ১৮ দিনের মধ্যে রোগী মারা যায়।
পাকিস্তানের যে ব্যক্তির PAM সংক্রমণ দ্বারা মৃত্যু হয় তার নাম আওরঙ্গজেব। গত ৭ জুলাই কায়েদাবাদের একটি খামার বাড়িতে বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিক করতে গিয়ে তিনি সুইমিংপুলে সাঁতার কাটেন। বাড়িতে ফেরার কিছুক্ষণ পরেই আওরঙ্গজেবের শরীরে দেখা যায় জ্বর এবং বমি বমি ভাব। তড়িঘড়ি ১০ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। ১১ই জুলাই নিশ্চিত হয় আওরঙ্গজেব PAM দ্বারা আক্রান্ত।
আওরঙ্গজেবের মৃত্যু পাকিস্তানে এই প্রথম ঘটনা নয়। এর আগেও দুজন ওই একই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এটি তৃতীয় নম্বর মৃত্যু। তবে শুধু পাকিস্থানে নয়, এই একই রোগ দেখা দিয়েছে ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। গতবছর দক্ষিণ কোরিয়ার এক ব্যক্তির শরীরেও এই একই লক্ষণ দেখা যায়, পরবর্তীকালে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
চলতি বছর কেরালার এক পাঁচ বছরের শিশু কন্যার মৃত্যু হয় এই বিরল সংক্রমনে। কেরালার ওই ছোট্ট শিশু কন্যা পি এ এম – এর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে বেশ কিছুদিন ভর্তি ছিল। ভেন্টিলেশনেও রাখতে হয়েছিল তাকে। কিন্তু তার পরেও শেষ রক্ষা হয়নি। বিরল এই সংক্রমণ কেড়ে নেয় ৫ বছরের ছোট্টও ফুটফুটে মেয়ের প্রাণ। ওই শিশু কন্যার শরীরেও এই ভাইরাস প্রবেশ করে যখন সে নদীতে স্নান করতে যায়। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, মূলত জল থেকেই শরীরে প্রবেশ করে এই অ্যামিবা।