চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারত জিতলেও সমালোচনার মুখে পড়েছেন কেএল রাহুল। এই ম্যাচে উইকেটের পিছনে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের কারণে আবারও প্রশ্নের মুখে পড়েছেন রাহুল। ক্ষুব্ধ ভক্তরা চাইছেন, গৌতম গম্ভীর(Gautam Gambhir) ও রোহিত শর্মা(Rohit Sharma) কঠিন সিদ্ধান্ত নিক। রাহুলকে বাদ দিয়ে ঋষভ পন্তকে সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজের পর থেকেই একাদশের বাইরে রয়েছেন পন্ত। তবে এখন প্রশ্ন হল কেএল রাহুলকে বাদ দেওয়া কি আদৌ ন্যায্য হবে, নাকি তিনি আবারও বলির পাঁঠা হচ্ছেন?
এটি প্রথমবার নয়, যখন কেএল রাহুলকে কয়েকটি ব্যর্থতার পর দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ৩২ বছর বয়সি এই ব্যাটসম্যান সবসময়ই দলের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন, ওপেনিং ব্যাটার, মিডল অর্ডার ব্যাটার বা উইকেটকিপার যে কোনও ভূমিকাই দেওয়া হয়েছে, তিনি দায়িত্বের সঙ্গে পালন করেছেন। কিন্তু এত বহুমুখী হয়েও বারবার কয়েকটি ব্যর্থতার কারণে একাদশ থেকে বাদ পড়েছেন কেএল রাহুল।
গত বছর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে সিরিজের প্রথম টেস্টের পরও তাঁকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। যদিও তার আগের ম্যাচে বাংলাদেশ সফরে তিনি একটি অর্ধশতক করেছিলেন, তবুও সেটি আমলে নেওয়া হয়নি, কারণ ভারতীয় দলের সিনিয়র ব্যাটাররা তখন বাজে ফর্মে ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দোষটা গিয়ে পড়েছিল রাহুলের ওপর, অন্যদিকে বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার মতো তারকারা দীর্ঘ সময় সুযোগ পেয়েছেন।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজে কেএল রাহুলের উইকেটকিপিং পারফরম্যান্স দেখলেই বোঝা যায় যে, তিনি মোটেও খারাপ কিপার নন। বরং তার পারফরম্যান্স মিশ্র প্রকৃতির ছিল। এখন পর্যন্ত তিনি চারটি ক্যাচ ফেলেছেন রাহুল। যার মধ্যে দুটি ছিল নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ও একটি বাংলাদেশ ম্যাচে, যেখানে তিনি তিনটি ক্যাচ নিয়ে ‘ফিল্ডার অফ দ্য ম্যাচ’ নির্বাচিত হয়েছিলেন, যদিও জাকার আলির একটি স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজে রাহুলের কিপিং পারফরম্যান্স:
১) ১ম ওয়ানডে: ক্যাচ – ২, স্টাম্পিং – ১, ক্যাচ মিস – ০
২) ২য় ওয়ানডে: ক্যাচ – ০, স্টাম্পিং – ০, ক্যাচ মিস – ১
৩) ৩য় ওয়ানডে: ক্যাচ – ১, স্টাম্পিং – ১, ক্যাচ মিস – ১
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রাহুলের কিপিং পারফরম্যান্স:
১) বাংলাদেশের বিরুদ্ধে: ক্যাচ – ৩, স্টাম্পিং – ০, ক্যাচ মিস – ০
২) পাকিস্তানের বিরুদ্ধে: ক্যাচ – ১, স্টাম্পিং – ০, ক্যাচ মিস – ০
৩) নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে: ক্যাচ – ০, স্টাম্পিং – ১, ক্যাচ মিস – ২
সবচেয়ে বেশি ডিসমিসাল করা উইকেটকিপার
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এখন পর্যন্ত কেএল রাহুলই সবচেয়ে বেশি ডিসমিসাল করা উইকেটকিপার। তার সংগ্রহ ৪টি ক্যাচ ও ১টি স্টাম্পিং, অর্থাৎ প্রতি ইনিংসে গড়ে ১.৬৬৬ ডিসমিসাল করেছেন তিনি। যদিও তার ব্যাটিং পারফরম্যান্স আহামরি কিছু নয়, তবে সেটার জন্য দায়ী তার ব্যাটিং পজিশনের পরিবর্তন। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁকে ছয় নম্বরে নামিয়ে দিয়েছে, যেখানে অক্ষর প্যাটেলকেও তার ওপরে ব্যাট করতে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপরাজিত ৪১ রানের ইনিংস খেলে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন কেএল রাহুল। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি এবং নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাত্র ২৩ রান করে আউট হন। কিন্তু মাত্র একবার ব্যর্থতার পর তাঁকে বাদ দেওয়া ভুল বার্তা দেবে।
রাহুল অতীতেও ভারতীয় দলের জন্য কঠিন সময়ে পারফর্ম করেছেন। বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে, যখন রোহিত শর্মা প্রথম টেস্টে খেলেননি, তখন পার্থের বাউন্সি উইকেটে তিনি দারুণ টেকনিক দেখিয়ে যশস্বী জসওয়ালকে গাইড করেছিলেন এবং দলকে জেতাতে সহায়তা করেছিলেন। কিন্তু রোহিত ফিরে আসার পর তাকে মিডল অর্ডারে পাঠানো হয়, যার ফলে তার ছন্দ নষ্ট হয়। পরবর্তীতে যখন রোহিত ফর্ম হারান, তখন রাহুলকে আবার ওপেনার হিসেবে ফেরানো হয়, কিন্তু এক পজিশন থেকে আরেক পজিশনে বদলানোর ফলে তার ধারাবাহিকতায় প্রভাব পড়ে।
একসময় ভারতের ভবিষ্যৎ তারকা এবং বিরাট কোহলির উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচিত হতেন রাহুল এখনও তার সত্যিকারের সম্ভাবনার পূর্ণ ব্যবহার করতে পারেননি। তার ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও টিম ম্যানেজমেন্টও তাকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং তাকে দলের প্রয়োজন মতো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে, একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তোলার পরিবর্তে। সেই কারণেই মনে করা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কেএল রাহুলই উইকেটের পিছনে থাকবেন।