আরও এক পৈশাচিক ও নৃশংস ঘটনার সাক্ষী হতে হল বাংলার মানুষকে। এবারের ঘটনাস্থল কলকাতার গা ঘেঁষা দক্ষিণ দমদম পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রমোদ নগর। স্থানীয় এক বাসিন্দাকে পিটিয়ে খুন করলেন তাঁরই প্রতিবেশীরা! এটুকু জেনেই যদি মনে এ কোন অসভ্য সমাজে বাস করছি আমরা? তাহলে গণপিটুনির কারণ জানলে আরও হাড় হিম হয়ে যাবে। কারণ, দাবি করা হচ্ছে, যাঁকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে, সেই ব্যক্তি আর একজন প্রতিবেশীর দুই চোখ উপড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন!
ঘটনা প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, এই এলাকারই দুই বাসিন্দা হলেন – প্রদীপ সরকার ও গোকুল মণ্ডল। এঁদের মধ্যে প্রথম জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ হল, তিনি সর্বদাই আকণ্ঠ মদ্যপান করেন এবং যখন-তখন, যেখানে-সেখানে টাল খেয়ে পড়েন। এবং এই প্রদীপ নাকি এলাকারই এক মহিলাকে কুনজরে দেখতেন।
এহেন প্রদীপ সরকার বুধবার (৫ মার্চ, ২০২৫) ভোরেও মদ্যপান করে টলোমলো পায়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন প্রায় ভোর ৫টা হবে। হঠাৎ টাল সামলাতে না পেরে তিনি গোকুল মণ্ডলের বাড়ির সদরে এসে ধাক্কা খান এবং সেখানেই পড়ে যান!
দাবি করা হচ্ছে, এত নাকি গোকুল মণ্ডল বেজায় রেগে যান এবং অভিযোগ করেন তাঁর স্ত্রীর প্রতিই প্রদীপের কুনজর রয়েছে! এ নিয়ে দু’জনের মধ্য়ে ওই ভোরবেলাতেই রাস্তায় তর্কাতর্কি শুরু হয়। শেষে প্রদীপকে মারধর করতে শুরু করেন গোকুল এবং সবশেষে প্রদীপকে রাস্তায় ফেলে তাঁর বুকের উপর চেপে বসেন। এভাবে প্রদীপের বুকে বসেই গোকুল নাকি তাঁর দুই চোখ উপড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন!
প্রদীপের চিৎকারে পড়শিদের ঘুম ভেঙে যায়। এবং তাঁরা বাইরে এসে এই দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে যান। অভিযোগ, এরপর গোকুল প্রদীপের টেনে হিঁচড়ে তাঁর বাড়ির ভিতর নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে প্রতিবেশীরা ক্ষেপে যান এবং তাঁরা পালটা গোকুলকে ধরে পেটাতে শুরু করেন!
এই খবর কেউ বা কারা স্থানীয় থানায় পাঠায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রদীপ ও গোকুল – দুই প্রতিবেশীকেই উদ্ধার করে। কিন্তু, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা গোকুলকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
সূত্রের দাবি, প্রদীপকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও তাঁর অবস্থা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। তাঁর দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি আদৌ থাকবে কিনা, সেটাও নিশ্চিত নয়।
এদিকে, এই ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গিয়েছেন এলাকাবাসী। এমনটাও যে হতে পারে, তা যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না তাঁদের। সবথেকে বড় কথা হল, এই গোটা ঘটনায় যাঁরা যুক্ত, তাঁরা সকলেই একে অপরের চেনা, পরস্পরের প্রতিবেশী! প্রশ্ন উঠছে, পাড়া পড়শিরাই যদি এভাবে একে-অপরের শত্রু হয়ে ওঠেন, তাহলে মানুষ কোথায় নিরাপত্তা খুঁজবে?
এদিকে, পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তারা এলাকার সিসিটিভি ক্য়ামেরার ফুটেজগুলি খতিয়ে দেখছে।