শ্বশুরের হাতে বধূ খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য। আদালতে দাঁড়িয়ে ধৃত দাবি করলেন, তাঁর সঙ্গে দিনের পর দিন অন্যায় করা হয়েছে। টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, বৃদ্ধকে দিয়েই করানো হত বাড়ির সমস্ত কাজ। যার জেরে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল বৃদ্ধের মনে। পরিণতি হয়েছে ভয়ংকর।
বাড়িতে ছেলে না থাকার সুযোগে হুগলির ভদ্রেশ্বরে(Bhadreshwar) ঘুমন্ত বউমাকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল শ্বশুরের বিরুদ্ধে। শনিবারই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল অভিযুক্তকে। রবিবার তাঁকে চন্দননগর মহাকুমা আদালতে পেশ করে ভদ্রেশ্বর থানার পুলিশ। সেখানেই খুনের কথা স্বীকার করে নেন বৃদ্ধ। বলেন, তিনি শাবল এবং কাটারি দিয়ে বউমাকে খুন করেছেন। কিন্তু কেন এই নৃশংসতা? তার উত্তরেই উঠে এসেছে অত্যাচারের কাহিনী।
বৃদ্ধ জানিয়েছেন, দিনের পর দিন তিনি রেলে কর্মরত ছেলে ও বউমার দ্বারা অত্যাচারিত হয়েছেন। ধৃতের দাবি, ছেলের সঙ্গে তাঁর একটি জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট ছিল। সেখান থেকে যাবতীয় টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেন ছেলে। এখানেই শেষ নয়, বেকার ভাতার টাকাতেও হাত দেয় তাঁরা। জানা গিয়েছে, মেয়ের থেকেও টাকা নেওয়া নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল। তবে ঝামেলা শুধু নয় টাকা নিয়ে নয়। বাড়ির যাবতীয় কাজ নাকি করতে হত বৃদ্ধকে। যাকে কেন্দ্র করে অশান্তি।
প্রসঙ্গত ১১ বছর ছেলের সাথে সংসার করলেও শ্বশুরের মন কাড়তে পারেননি বৌমা। শাশুড়ি বেশ কয়েক বছর আগেই মারা গেছিলেন। সংসারে ছিল শ্বশুর আর দুই ননদ।অভিযোগ,বড় ননদ নাকি ক্রমাগতই বৌমার বিপক্ষে উস্কানিমূলক কথা লাগাতো শ্বশুরের কানে।কম যেত না ছোট ননদও।তারা বলত,বাবা তোমার সব সম্পত্তি তোমার ছেলে বৌমা নিয়ে নেবে,আর তোমাকে রাস্তায় বের করে দেবে।ক্রমশই কানের সামনে বলে যেত বৌমা ভালো না, বৌমার অন্য ছেলেদের সাথে সম্পর্ক আছে। ফলে বৌমা চোখের বিষ হয়ে উঠেছিল ৭o বছরের ঊর্ধ্বে শ্বশুরের।প্রায় দিনই বৌমার সাথে নোংরা ভাষায় গালিগালাজ করত শ্বশুর।ছেলে বাবাকে বারণ করলেও শুনত না তিনি।যার কারণে ছেলে তার স্ত্রীকে বলত , “বাবা তো আর বেশিদিন বাঁচবে না,তাই সহ্য করো,তার কথায় উত্তর দিতে হবে না “। আর সেই বাবাই যে স্ত্রীর সাথে এমন নৃশংস কাণ্ড ঘটাবে তা স্বপ্নেও ভাবেনি ছেলে নীলাংশু।
সম্পর্ক কোনওদিনই ভালো ছিল না শ্বশুর-বৌমার। তার জেরে ১০ বছরের নাতনির সামনেই তার মাকে কুপিয়ে খুন করল সত্তরোর্ধ্ব হেমাংশু মিত্র। পরে পুলিশ গ্রেফতার করে হেমাংশুকে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানার চেষ্টা করবে ঠিক কী কারণে এরকম নৃশংস কাজ করলেন সাধারণ পরিবারের এক প্রৌঢ়।
কতটা পাশবিক প্রবৃত্তি মানুষের মধ্যে ঢুকলে নিজের ছেলের স্ত্রীকে কুপিয়ে খুন করতেও হাত কাঁপে না শ্বশুরমশাইয়ের।ভদ্রেশ্বর পাল পাড়ার হেমাংশু মিত্র বাড়ির একটি ঘরে বৌমা মিঠু মিত্র ও তার মেয়ে একসঙ্গে ঘুমাচ্ছিলেন। ছেলে নীলাংশু বাজার করতে গিয়েছিলেন। সেই সময় বাড়ির সমস্ত দরজা বন্ধ করে দিয়ে বৌমার গলায় কাটারি দিয়ে একাধিক বার কোপ দেয় প্রৌঢ়। চিৎকার চেঁচামেচিতে পাশে ঘুমিয়ে থাকা দশ বছরের নাতনি উঠে যায়। এই দৃশ্য দেখে চিৎকার করতে থাকে সে। রক্তে রক্তময় হয়ে যায় ঘর।এরপর প্রৌঢ় দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে যান।
চিৎকার চেঁচামেচিতে প্রতিবেশিরা ছুটে এলে তাদেরও কোপানোর ভয় দেখান হেমাংশু। এরপর কোনওক্রমে তাঁরা ঘরে প্রবেশ করেন। মিঠুকে উদ্ধার করে চন্দননগর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে। খবর দেওয়া হয় মিঠুর স্বামী নীলাংশুকে ও ভদ্রেশ্বর থানায়। পরে পুলিশ হেমাংশুকে গ্রেফতার করতে গেলে প্রতিবেশীরা প্রাথমিকভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন।কী কারণে এমন নৃশংস কাজ করলেন হেমাংশু তার উত্তর খুঁজছে পুলিশ। রেলে কর্মরত নীলাংশুর সঙ্গে তাঁর বাবার সম্পর্কও খারাপ ছিল না। তবে বৌমা মিঠুর সঙ্গে প্রায়শই ঝামেলা গত হেমাংশুর। বৌমাকে তিনি মানসিক নির্যাতন করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে চন্দননগর হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ ময়না তদন্তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।