প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী(Narendra Modi) সংসদে একটি বইয়ের নাম উল্লেখ করেছেন। জেএফকে-র ফরগটেন ক্রাইসিস। এক প্রাক্তন CIA অফিসার এই বই লিখেছিলেন। সেই বইতে ১৯৬২ সালের যুদ্ধ ও প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির জমানায় মার্কিন ফরেন পলিসি নিয়ে নানা কথা বলা হয়েছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটটা কী?
১৯৬০ সালের প্রথম দিক। এক দেশের সঙ্গে অপর দেশের তখন পারস্পরিক দ্বন্দ্ব কার্যত রূপ নিচ্ছে ঠান্ডা যুদ্ধের দিকে। বিশ্ব তখন ওয়েস্টার্ন ব্লক-ইস্টার্ন ব্লকে বিভক্ত। ওয়েস্টার্ন ব্লকের নেতৃত্বে আমেরিকা। ইস্টার্ন ব্লকের নেতৃত্বে সোভিয়েত ইউনিয়ন। আর সেই সময় ভারতের মতো কিছু দেশ যারা সদ্য স্বাধীন হয়েছিল তারা একটা নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করছিল।
সেই সময় জওহরলাল নেহেরু সেই সময় কোনও সুপার পাওয়ারের আওতায় না থেকে পারস্পরিক শান্তি সমঝোতার মাধ্য়মে থাকার চেষ্টা করতেন।
সেই সময় চিন মাও জে দংয়ের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট শক্তি হিসাবে উঠে আসছিল। ১৯৪৯সালের কমিউনিস্ট আন্দোলনের পরে চিনের অবস্থানকে ঘিরে নানা ধরনের চর্চা হচ্ছিল। সেই সময় ভারত চিনের সম্পর্ক নিয়ে বলা হল-হিন্দি চিনি ভাই ভাই…তবে পরবর্তীকে আকসাই চিন ও অরুণাচল প্রদেশ ইস্যুতে সীমান্ত এলাকায় তাদের সম্পর্ক ক্রমশ ভেঙে যেতে থাকে।
এদিকে এই টেনশনের সময় গোটা বিশ্বে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হয়েছিল। কিউবান মিসাইল ক্রাইসিস। এর জেরে পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়েছিল যে আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্য়ে পারমাণবিক যুদ্ধ প্রায় হয়-হয় অবস্থা। সেই সময় সিনো-ইন্ডিয়ান যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হল।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে,আসলে নেহেরুর বিদেশ নীতি ছিল সরাসরি কোনও নৌকায় উঠতে চায়নি ভারত সেই সময়। অর্থাৎ ওয়েস্টার্ন ও ইস্টার্ন দুই ব্লকের সঙ্গেই সু সম্পর্ক রেখে চলার চেষ্টা করত। আর ওই বইতে উল্লেখ করা আছে যে নেহেরুর এই আদর্শবাদিতার জেরে চিনের আগ্রাসনটা ঠিক তিনি আঁচ করতে পারেননি। চিন আগ্রাসন করছে এনিয়ে পরিষ্কার চিত্র থাকা সত্ত্বেও সেই সময় নেহেরু সশস্ত্র সংঘর্ষের কথা ভাবতেন না। আর চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি যখন ১৯৬২ সালের অক্টোবর মাসে একেবারে প্রস্তুত হয়ে মাঠে নামল তখন ভারতের বাহিনী অপ্রস্তুত। সমর সরঞ্জামও সেভাবে নেই। সেই সঙ্গে অত উচ্চতায় লড়াই করার মতো পরিস্থিতিও তাদের নেই। আর সেটা নেহেরুর কাছে ছিল রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্তরে বিরাট আঘাত। সেই সময় ভারতের দুর্বল প্রতিরক্ষানীতিও সামনে আসে।