বাংলাদেশের ইউনুস সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সেই দেশে ইসলামি মৌলবাদ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এই আবহে বাংলাদেশর হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার সংখ্যাও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। যদিও সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে ইউনূস সরকার চিনকে সন্তুষ্ট করতে ব্যস্ত। এদিকে ইউনুসের প্রেস সচিব আবার ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন’। ওয়াকফ হিংসা নিয়ে দিল্লিকে তিনি ‘জ্ঞান’ দিতেও এসেছিলেন। তবে এহেন বাংলাদেশেই যে সংখ্যালঘুরা নিরাপদ নন, তার আরও এক নিদর্শন সামনে এল। বাংলাদেশে আরও এক হিন্দু নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করা হল রিপোর্টে। বাংলাদেশের উত্তরে দিনাজপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক বিশিষ্ট নেতাকে তাঁর বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে।
নাম ভবেশ চন্দ্র রায় (৫৮)। তিনি ঢাকা থেকে ৩৩০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে দিনাজপুরের বাসুদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। গত ১৭ এপ্রিল রাত ১০টার দিকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ও মৃতের পরিবারকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি স্টার জানিয়েছে, ১৭ এপ্রিল বিকেলে ভবেশকে বাড়ি থেকে অপহরণ করেছিল দুষ্কৃতীরা। ভবেশের রায়ের স্ত্রী সান্ত্বনা জানান, ১৭ এপ্রিল বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ একটি ফোন আসে এবং অপরাধীরা নিশ্চিত করে যে তিনি বাড়িতেই আছেন কি না। জানা গিয়েছে, সেই ফোনের প্রায় ৩০ মিনিট পর দু’টি মোটরসাইকেলে করে চারজন লোক এসে ভবেশকে তাঁর বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপরে ভবেশ রায়কে নরবাড়ি গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নাকি উন্মত্ত মৌলবাদী জনতা তাঁকে নির্মমভাবে মারধর করে। পরে ভবেশকে উদ্ধার করে দিনাজপুর হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁর পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পর তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
ভবেশ রায় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি ও স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। বিরল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সবুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, শিগগিরই এ বিষয়ে মামলা দায়ের করা হবে। এদিকে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এদিকে পুলিশ আধিকারিক জানান, আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের প্রস্তুতি চলছে।
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছিলেন, ‘মুর্শিদাবাদে যে হিংসার ঘটনা ঘটেছে, সেটার সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করার যে কোনও প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা করছি। আমরা মুসলিমদের উপরে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। যে ঘটনার জেরে প্রাণহানি এবং সম্পত্তিহানি হচ্ছে। আমরা ভারত সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সংখ্যালঘু মুসলিমদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আর্জি জানাচ্ছি।’ এদিকে ভারত ইতিমধ্যেই শফিকুলের এহেন বিভ্রান্তিকর এবং ভিত্তিহীন মন্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই নিয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়লওয়ালের জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গের ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। এটি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নৃশংসতা সম্পর্কে ভারতের উদ্বেগের সাথে তুলনা করার একটি প্রচ্ছন্ন এবং ভুল প্রচেষ্টা। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের অপরাধীরা বাংলাদেশে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাংলাদেশের উচিত অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য ও নৈতিকতা প্রদর্শনের পরিবর্তে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় মনোযোগী হওয়া।’