জো বাইডেনের আমলে ভারত-রাশিয়া সম্পর্কে অনেক বাধা বিপত্তি তৈরির চেষ্টা করেছিল আমেরিকা। রাশিয়ার থেকে ভারতের তেল কেনার ওপর মৌখিক আপত্তি জানিয়েছিল ওয়াশিংটন। এদিকে রাশিয়া থেকে এস-৪০০ মিসাইল কেনার জন্যে ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞার খাঁড়া ঝোলানোর বার্তা দিয়ে রেখেছিল আমেরিকা। ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে রাষ্ট্রসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটদানের জন্যেও ভারতের কাছে প্রাথমিক ভাবে আবেদন জানানো হয়েছিল পশ্চিমা দেশগুলির তরফ থেকে। তবে এই সব চাপের মুখেও ভারত অটল থেকেছে। নিজেদের স্বাধীন বিদেশ নীতি গ্রহণ করে ভারত নিজের মতো রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখেছে। এদিকে ওয়াশিংটনে পালা বদলের পর থেকে আমেরিকা এবং রাশিয়ার সম্পর্কে বদল এসেছে। সাম্প্রতিককালে ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে ট্রাম্প যেন রাশিয়ারই পক্ষ নিচ্ছেন। এই আবহে আশা করা যায়, ভারত-রুশ বন্ধুত্বে আমেরিকার নাক গলানো কিছুটা হলেও কমবে আপাতত। যা ভারতের জন্যে ‘সুখবর’। এদিকে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যও বাড়াতে চাইছে ভারত। এহেন পরিস্থিতিতে ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি এবার মস্কো সফরে যাচ্ছেন।
রিপোর্ট অনুযায়ী, আগামী ৭ মার্চ রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্রকে উদ্ধৃত করে হিন্দুস্তান টাইমসের রিপোর্টে জানানো হয়েছে, রুশ বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন বিক্রম মিশ্রি। এছাড়াও তাঁর একদিনের সফরে অন্যান্য শীর্ষ রুশ নেতৃত্বের সদস্যদের সঙ্গেও বৈঠক করতে পারেন ভারতের বিদেশ সচিব। সূত্রের দাবি, এই সফর উভয় পক্ষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতে মতবিনিময়ের একটি সুযোগ হবে। আশা করা হচ্ছে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, বিশেষ করে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে আরও ভারসাম্যপূর্ণ করার জন্য ভারতীয় রপ্তানি বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বিক্রমের এই রুশ সফরের সময়ে। এর পাশাপশি অতিরিক্ত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে ভারতে রাশিয়ার জ্বালানি সরবরাহ বজায় রাখা নিয়েও কথা হতে পারে। এছাড়া ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হতে পারে এই সফরে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্পের নেতৃত্বে আমেরিকার অবস্থান বদলের ফলে ইউক্রেন ইস্যুটি কোন দিকে মোড় নিতে পারে, সেদিকে নজর থাকছে ভারতেরও।
ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের মূল্য বর্তমানে প্রায় ৬৬ বিলিয়ন ডলার। যদিও ২০২২ সাল থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেলের ব্যাপক ক্রয়ের কারণে এই অঙ্কটা রাশিয়ার পক্ষে ঝুঁকে রয়েছে। অর্থাৎ, বাণিজ্যের কারণে ভারতকে পণ্য বিক্রি করে বেশি টাকা ঘরে তুলেছে রাশিয়া। এই আবহে দুই দেশের বাণিজ্যকে আরও ভারসাম্যপূর্ণ করতে রাশিয়ার বাজারে আরও বেশি প্রবেশাধিকার চেয়েছে ভারত। এর আগে দুই পক্ষের তরফে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।