সামগ্রিকভাবে ভারতের শিল্পোজাত উৎপাদন একধাক্কায় অনেকটাই কমেছে। বস্তুত, গত ফেব্রুয়ারি মাসে (২০২৫) ভারতের শিল্পজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির হার কমে হয়েছে মাত্র ২.৯ শতাংশ। যা শেষ ছ’মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। অথচ, তার আগের মাসেও এই বৃদ্ধির হার ছিল ৫.২ শতাংশ। আজ (শুক্রবার – ১১ এপ্রিল, ২০২৫) এই সংক্রান্ত যে তথ্যভাণ্ডার প্রকাশ করা হয়েছে, তাতেই উঠে এসেছে পরিসংখ্যান। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই প্রবণতা মূল খাতের কর্মক্ষমতা প্রতিফলিত করছে। যা মোট শিল্পোৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশ।
আইসিআরএ (ইনভেস্টমেন্ট ইনফরমেশন অ্য়ান্ড ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড)-এর মুখ্য অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ার এই প্রসঙ্গে যদিও জানান, শিল্পোৎপাদনে বৃদ্ধির হার এভাবে কমে যাওয়াটা অপ্রত্যাশিত ছিল না মোটেই। লিপ ইয়ার ভিত্তি অনুসারে ‘ইয়ার ওভার ইয়ার’ বৃদ্ধির হার গত ফেব্রুয়ারি মাসে কমে ২.৯ শতাংশ হয়েছে। যা আইসিআরএ-র পূর্বাভাসের সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এদিন যে তথ্যভাণ্ডার প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে, পরিকাঠামো শিল্পের ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির হার একমাসের মধ্যেই অনেকটা কমেছে। গত জানুয়ারি মাসে যা ছিল ৫.১ শতাংশ, ফেব্রুয়ারি মাসে সেটাই কমে হয় ২.৯ শতাংশ। যা শেষ পাঁচমাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
গত আর্থিক বছরের হিসাব তুলে ধরলে দেখা যাবে, এপ্রিল মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে বৃদ্ধির হার ছিল ৪.১ শতাংশ। অথচ, তার ঠিক আগের আর্থিক বছরে ওই একই সময়ের মধ্যে এই হার ছিল ৬ শতাংশ।
শিল্পোৎপাদনের মধ্যে যদি প্রধান তিনটি ক্ষেত্রের কথা বলতে হয়, তাহলে একমাত্র বিদ্যুৎ ক্ষেত্রেই অবস্থা বেশ কিছুটা ইতিবাচক থাকতে দেখা গিয়েছে। এই ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ছিল – ৩.৬ শতাংশ। যা আগের মাসের তুলনায় (২.৪ শতাংশ) বেশ খানিকটা বেশি। কিন্তু, পণ্য নির্মাণ ও খনি শিল্পে বৃদ্ধির হার লাগাতার কমেছে।
গত জানুয়ারি মাসে পণ্য নির্মাণ ও খনি শিল্পে উৎপাদন সংক্রান্ত বৃদ্ধির হার ছিল – যথাক্রমে – ৫.৮ শতাংশ এবং ৪.৪ শতাংশ। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তা কমে হয় – যথাক্রমে – ২.৯ শতাংশ এবং ১.৬ শতাংশ। এর মধ্যে খনি ক্ষেত্রে উৎপাদন সংক্রান্ত বৃদ্ধির হার গত চারমাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল।
ব্যবহার নির্ভর শিল্পগুলির আওতাভুক্ত ছ’টি ক্ষেত্রেই উৎপাদনের হার ছিল নিম্নমুখী। কনজিউমার নন-ডিউরেবল ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ১.৮ শতাংশ থেকে কমে হয় – ০.৩ শতাংশ। অন্যদিকে, কনজিউমার ডিউরেবল ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ৭.২ শতাংশ থেকে কমে হয় ৬.৪ শতাংশ।
মূলধনী পণ্য এবং পরিকাঠামো ক্ষেত্রেও বৃদ্ধির হার গত জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে কমেছে। মূলধনী পণ্যে বৃদ্ধির হার ১০.৩ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৯ শতাংশ এবং পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বৃদ্ধির ৭.৪ শতাংশ থেকে কমে ৬.৪ শতাংশ হয়েছে।
ওই একই সময়ের মধ্য়ে প্রাথমিক পণ্যের উৎপাদনে বৃদ্ধির হার কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে গিয়েছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, ৫.৫ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ২.৮ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, পণ্য নির্মাণ বা উৎপাদন হন ভারতীয় শিল্পের অন্যতম প্রধান মানদণ্ড। সদ্যসমাপ্ত আর্থিক বছরে যার বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৪.৩ শতাংশ। অথচ, তার আগের অর্থবর্ষে এই পরিমাণটাই ছিল ১২.৩ শতাংশ।