ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রে বেড়াতে গিয়ে মার্কিননিবাসী ভারতীয় বংশোদ্ভূত ছাত্রীর নিখোঁজের ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে।গত সপ্তাহেই বন্ধুদের সঙ্গে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের ওই দেশে ঘুরতে গিয়েছিলেন পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুদীক্ষা কোনাঙ্কি। ২০ বছর বয়সি ওই তরুণী গত বৃহস্পতিবার পুন্টা কানা শহরে সমুদ্রসৈকত থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন। তারপর থেকে টানা ৫ দিন ধরে জোরদার তল্লাশি চালাচ্ছে ডমিনিকান প্রজাতন্ত্র কর্তৃপক্ষ।নিখোঁজ ছাত্রীর খোঁজে ড্রোন, হেলিকপ্টার এবং নৌবাহিনী-সহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। ভারতীয় দূতাবাস ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে তল্লাশি কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করছে।
ডমিনিকান ন্যাশনাল এমার্জেন্সি সিস্টেম থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, নিখোঁজ তরুণীকে বৃহস্পতিবার ভোরে পুন্টা কানার রিউ রিপাব্লিকা হোটেলের সমুদ্রসৈকতে শেষবার দেখা গিয়েছিল। তার আগে ৫ মার্চ রাতে ওই তরুণী তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে একটি নাইটক্লাবে গিয়েছিলেন। ছাত্রীর খোঁজে পুরোদমে তল্লাশি শুরু হলেও এখনও পর্যন্ত কোনও চিহ্ন মেলেনি তাঁর। স্থানীয় সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা ১৫ মিনিটে নিখোঁজ হয়ে যান সুদীক্ষা।সমুদ্র সৈকতের অদূরে বসানো এক সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ভোরে এক ঝাঁক তরুণ-তরুণীর সঙ্গে ছিলেন সুদীক্ষাও। তবে ভোর ৫ টা ৫৫ মিনিটে তার বেশিরভাগ বন্ধু হোটেলে ফিরে আসলেও সুদীক্ষা একজন ব্যক্তির স্বর্গে সমুদ্র সৈকতেই থেকে গিয়েছিল। এখনও পর্যন্ত ওই ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। ওই ব্যক্তি তদন্তকারীদের জানিয়েছে, তারা সমুদ্রে সাঁতার কাটতে গিয়েছিলেন এবং প্রবল ঢেউয়ের কবলে পড়েন। তীরে ফিরে এসে তিনি বমি করেন এবং একটি লাউঞ্জ চেয়ারে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখেন সুদীক্ষা কোথাও নেই।সিসিটিভি ক্যামেরায় সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে ওই ব্যক্তিকে হোটেল রুমে ফিরে আসতে দেখা গিয়েছে।
ইতিমধ্যে সুদীক্ষার সঙ্গে ওই সময় যাঁরা ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। মনে করা হচ্ছে, সমুদ্রে স্নান করতে নেমে তলিয়ে গিয়ে থাকতে পারেন ওই তরুণী। অপহৃত হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রে নিখোঁজ ব্যক্তিদের অনলাইন এক পোস্টারেও সুদীক্ষার উল্লেখ রয়েছে। শেষবার তাঁকে যখন দেখা গিয়েছিল, তাঁর পরনে ছিল বাদামি বিকিনি, কানের দুল। ডান পায়ে ছিল নূপুর, হাতে ছিল নানা রঙের পুঁতির ব্রেসলেট।
এদিকে পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সুদীক্ষা কোনাঙ্কির পরিবারের পাশাপাশি ভার্জিনিয়ার লাউডাউন কাউন্টির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাঁকে খুঁজে পেতে এবং নিরাপদে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার জন্য সব রকমভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, বসন্তকালীন ছুটিতে সহপাঠীদের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিলেন সুদীক্ষা। অন্যদিকে, মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে ভেঙে পড়েছে সুদীক্ষার পরিবার। সুদীক্ষার বাবা সুব্বারায়ুদু কোনাঙ্কি জানিয়েছেন, পিটসবার্গে বসন্তের ছুটিতে পুন্টা কানা গিয়েছিল তাঁর মেয়ে। পড়াশোনাতেও বরাবরই ভাল ছিলেন সুদীক্ষা। বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাইতেন। তিনি বলেন, ‘বুধবার মেয়ে তাঁর বন্ধুদের জানিয়েছিল যে সে রিসর্টে একটি পার্টিতে যাচ্ছে। ভোর ৪টার দিকে বন্ধুদের সঙ্গে সমুদ্র সৈকতে গিয়েছিল মেয়ে। এর কিছুক্ষণ পর ওর বন্ধুরা ফিরে এলেও আমার মেয়ে আর ফিরে আসেনি।’কোনাঙ্কির বাবা আরও বলেন, তিনি চান স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জলাভিযানের পাশাপাশি অপহরণ বা নারী পাচারের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখুক।