এতদিন বাংলাদেশ যে সুবিধা পাচ্ছিল, সেটা বন্ধ করে দিল ভারত। বুধবার ভারত সরকারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশ যে ট্রান্স-শিপমেন্ট সুবিধা পেত, সেটা বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ এবার থেকে আর ভারতের স্থলবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনও দেশে নিজেদের পণ্য পাঠাতে পারবে না বাংলাদেশ। আর সেই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের কপাল পুড়লেও ভারতীয় ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। ব্যবসায়ী মহলের মতে, কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে পোশাক, জুতো, গয়না, রত্নের মতো ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকা ভারতীয় ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। বিশেষত বাংলাদেশের সঙ্গে পোশাক ক্ষেত্রে ভারতের সরাসরি প্রতিযোগিতা ছিল। ফলে লাভবান হবেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। সেখানে বাংলাদেশের রক্তচাপ বাড়বে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
ভারতের উপরেই নির্ভর করত বাংলাদেশ
থিঙ্কট্যাঙ্ক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, ভারত ট্রান্স-শিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার পরে বাংলাদেশের আমদানি ও রফতানির পুরো বিষয়টি ঘেঁটে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ তৃতীয় দেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতের পরিকাঠামোর উপরে নির্ভর করে থাকত বাংলাদেশ।
সময় বেশি লাগবে, খরচ বাড়বে, চাপে বাংলাদেশ
সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অজয় জানিয়েছেন যে আগে ট্রান্স-শিপমেন্ট সুবিধা পাওয়ায় ভারতের মধ্যে দিয়ে কম সময় এবং সস্তায় জিনিসপত্র রফতানি করতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু এবার সেই সুবিধা না থাকায় বাংলাদেশের রফতানিকারকদের পণ্য পাঠাতে অনেকটা বেশি সময় লাগতে পারে। বাড়তে পারে খরচ। রফতানি নিয়ে প্রবল অনিশ্চয়তার বাতাবরণ তৈরি হতে পারে বলে জানিয়েছেন গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা।
‘উড়তে থাকা’ বাংলাদেশের ডানা ছেঁটে দিল ভারত?
আর ভারত যে সেই পদক্ষেপ করেছে, সেটার নেপথ্যে বাংলাদেশই আছে বলে মনে করছেন অজয়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি জানিয়েছেন যে চিকেনস নেক বা শিলিগুড়ি করিডরের একেবারে কাছেই চিনের সহায়তায় বাংলাদেশ যে সামরিক ঘাঁটি তৈরি করার পরিকল্পনা করছে, সেটার প্রেক্ষিতেই ভারত এরকম পদক্ষেপ করতে পারে। যদিও কেন ট্রান্স-শিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে ভারত সরকারের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
মঙ্গলবার ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ইনডিরেক্ট ট্যাক্সেস এবং কাস্টমসের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২০২০ সালের ২৯ জুন যে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল, সেটা অবিলম্বে বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ভারতীয় ভূখণ্ডে যে বাংলাদেশি পণ্য ঢুকে পড়েছে, সেগুলি নিয়ম মেনে বের করে নিতে হবে বলে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ইনডিরেক্ট ট্যাক্সেস এবং কাস্টমসের তরফে জানানো হয়েছে।
২০২০ সালের জুনের যে নির্দেশিকার কথা বলা হয়েছিল, সেটার মাধ্যমেই বাংলাদেশ ট্রান্স-শিপমেন্টের সুবিধা পেয়েছিল। ভারতের বদন্যতায় মসৃণভাবে ভুটান, নেপাল, মায়ানমারের মতো দেশে পণ্য রফতানি করতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু এখন সেই তারটা কেটে দিল ভারত।