চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে কার্যত পাকিস্তানের মতো ফিল্ডিং করল ভারতীয় দল। সাধারণত পাকিস্তানের খেলা থাকলে যেরকম ক্যাচ ছাড়ার প্রদর্শনী দেখা যায়, আজ ঠিক সেটাই হল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে। একের পর এক ক্যাচ ফস্কালেন ভারতীয় তারকারা। আর যাঁরা তুলনামূলকভাবে ভালো ফিল্ডার হিসেবে পরিচিত, তাঁরাও একাধিক ক্যাচ ফস্কেছেন। যে তালিকায় শুভমন গিল, শ্রেয়স আইয়ারদের মতো ফিল্ডারও আছেন। আর তাঁরা যে ক্যাচগুলি ফস্কে দিয়েছেন, সেগুলি খুব একটা কঠিন ছিল না। বরং কঠিন কাজটা করে তাঁরা বলের কাছে পৌঁছে যান। শুধু বলটা ধরে রাখতে পারেননি। আর সেটার খেসারত ভারতকে দিতে হবে কিনা, সেটা পরে বোঝা যাবে। কিন্তু ভারতের ফিল্ডিংয়ে একেবারেই সন্তোষ প্রকাশ করেননি নেটিজেনরা।
কয়েক বলের ব্যবধানে রাচিনের জোড়া ক্যাচ ফস্কে যায়!
আর ভারতের সেই ক্যাচ ফেলার প্রদর্শনী শুরু হয় সপ্তম ওভার থেকে। ৬.৩ ওভারে নিজের বলেই ফলো থ্রু’তে রাচিন রবীন্দ্রের ক্যাচ ছাড়েন মহম্মদ শামি। ফলো থ্রু’তে যে কোনও ক্যাচ ধরাই কঠিন। কিন্তু আজ খুব একটা কঠিন ছিল না। দু’হাত দিয়েও ধরতে পারেননি শামি। সেইসময় ২৯ রানে খেলছিলেন রাচিন।
তার চার বল পরেই রাচিনের ক্যাচ ফেলে দেন শ্রেয়স। বরুণ চক্রবর্তীর বলে সুইপ করেন রাচিন। কিন্তু ঠিকমতো টাইমিং হয়নি। ডিপ মিড-উইকেট থেকে ২১ মিটার থেকে দৌড়ে এসে ক্যাচটা ধরার চেষ্টা করেন শ্রেয়স। শেষের দিকে এসে কিছুটা গতি কমিয়ে ফেলেন। সম্ভবত ঠিকমতো বলের পথ নির্ধারণ করতে পারেননি। তার জেরে তাঁর থেকে কিছুটা দূরে পড়ে বল। আর ডাইভ দিয়ে ক্যাচ ধরতে গেলেও সেই কাজটা করতে পারেননি শ্রেয়স।
পরপর ২ ওভারে ২ ক্যাচ ফস্কে দেয় ভারত!
সেই দু’বার জীবনদান পেয়েও বড় স্কোর করতে পারেননি রাচিন। তবে ডারিল মিচেল কিছুটা সুযোগের সদ্ব্য়বহার করে যান। ৩৪.৫ ওভারে তাঁর ক্যাচ ফস্কে ফেলেন রোহিত শর্মা। সেটা বেশ কঠিন ক্যাচ হলেও অবধারিতভাবে ‘হাফ-চান্স’ ছিল। অক্ষর প্যাটেলের বলে বড় শট মারতে যান কিউয়ি তারকা। ৩০ গজের বৃত্তের মধ্যে লাফিয়ে ক্যাচটা ধরতে যান রোহিত। কিন্তু আঙুলে লেগে বলটা বেরিয়ে যায়। তারপর ২০ রান যোগ করে যান মিচেল।
আর মিচেলের সেই ক্যাচ মিস হওয়ার পরের ওভারেই গ্লেন ফিলিপসের ক্যাচ ফস্কে দেন গিল। ৩৬ তম ওভারের শেষ বলে ডিপ স্কোয়ার লেগ থেকে অনেকটা দৌড়ে এসে ক্যাচ নেওয়ার চেষ্টা করেন। বলটার কাছে পৌঁছানোটাই মূলত কঠিন ছিল। কিন্তু সেখানে পৌঁছে গিয়ে ক্যাচটা ফস্কে দেন গিল। যিনি পরেও বাজে ফিল্ডিং করেন। তার জেরে সঙ্গে-সঙ্গে তাঁর ফিল্ডিংয়ের জায়গা পালটে দেন অধিনায়ক রোহিত।
ভারতের ফিল্ডিং দেখে হতাশ অনুষ্কাও!
শুধু রোহিত নন, ফাইনালে এরকম ফিল্ডিং দেখে হতাশ হয়েছেন নেটিজেনরাও। এক নেটিজেন বলেন, ‘এটাই বড় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের মধ্যে পার্থক্য। আমার মনে আছে, ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বরে (একদিনের বিশ্বকাপ ফাইনাল) ফিল্ডিং এবং ক্যাচ ধরার ক্ষেত্রে কী দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছিল অস্ট্রেলিয়া।’ এক নেটিজেন আবার কটাক্ষ করে বলেন, ‘ভারতীয় ফিল্ডাররা এখন ক্যাচ ছাড়ছেন, কারণ ওঁরাও জানেন যে অর্ধেক ফ্যানরা ঘুমিয়ে গিয়েছেন।’এমনকী শ্রেয়সের ক্যাচ ফস্কানোর দৃশ্য দেখে তো গ্যালারিতে বসে কার্যত মাথা ঠোকার মতো অবস্থা হয় অনুষ্কা শর্মার। সেমিফাইনালের মতোই ফাইনাল দেখতে দুবাইয়ের মাঠে আছেন বিরাট কোহলির স্ত্রী। আর শ্রেয়স যেই ক্যাচটা ফস্কে দেন, তখনই হতাশায় দাঁতে দাঁত চেপে ফেলেন। কিছু বলতেও থাকেন। হাত মুঠো করে হতাশায় পাশে বসে থাকা একজনের কাঁধে মাথা রেখে দেন। কপালে হাত দিয়ে রাখেন। যে অবস্থাটা সম্ভবত সব ভারতীয়েরই ছিল।