আজ আইএসএল কাপের ফাইনালে ভারতীয় ডিফেন্ডারদের ওপরই আস্থা রাখতে পারে বেঙ্গালুরু ফুটবল ক্লাবের কোচ জেরার্ড জারাগোজা। হাতে জোভানোভিচের মতো বিদেশি থাকলেও সেমিফাইনালের মতোই অল ইন্ডিয়ান ডিফেন্সে যেতে পারেন স্প্যানিশ কোচ। সেক্ষেত্রে আপ ফ্রন্টে এতজন অতিরিক্ত বিদেশি রাখার সুযোগ পাবে বেঙ্গালুরুর ক্লাবটি।
আসলে সাম্প্রতিক সময় বারবার দেখা গেছে, আইএসএল হোক বা জাতীয় দলের ক্ষেত্রে, ভারতীয় স্ট্রাইকারদের গোল স্কোরিং অ্যাবিলিটির অভাব। আসলে ভারতীয় ফুটবলারদের ছোট থেকেই স্ট্রাইকার হওয়ার যে বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা, সেটারই অভাব রয়েছে। কিন্তু সেদিক থেকে যদি ডিফেন্স দেখা যায়, তাহলে সেটা অনেক ক্ষেত্রেই শক্তিশালী। ছোট্ট উদাহরণ যদি দিতে বলা হয়, তাহলে দেখা যায় শেষ ২ দশকে ভারতীয় ফুটবলে স্ট্রাইকার বলতে নাম ভেসে আসে স্রেফ ভাইচুং এবং সুনীলের। কিন্তু ডিফেন্সের কথা বললে দীপক মণ্ডল থেকে মহেশ গাওলি, আনাস, সন্দেশ, আনওয়াররা নজর কেড়েছেন।
ফাইনালে অল ইন্ডিয়ান ডিফেন্স?
তাই বেঙ্গালুরুর কোচ জেরার্ড জারাগোজাও এফসি গোয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচের মতোই ফাইনালের হেভিওয়েট ম্যাচেও অল ইন্ডিয়ান ডিফেন্সের পথেই হাঁটতে চলেছেন কঠিন প্রতিপক্ষ মোহনবাগানের বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে পরিসংখ্যানও বিএফসির কোচকে ভরসা দিচ্ছেন। এবারের আইএসএলের প্লে অফে বেঙ্গালুরু মাত্র দুটি গোল খেয়েছে শেষ তিন ম্যাচে। অর্থাৎ ২৭০ মিনিটে মাত্র ২ গোল।
বেঙ্গালুরুর ডিফেন্সে কারা?
গোলের গুরপ্রীতের পাশাপাশি সেন্ট্রাল ডিফেন্সে রাহুল ভেকে এবং চিংলেনসানা সিং খেলছেন। দুই সাইড ব্যাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানো হচ্ছে নীখিল পুজারি, নামগাল ভুটিয়া, নাওরেম রোশন সিং এবং মহম্মদ সালাহকে। নিজেদের ২৭টা ম্যাচের মধ্যে এবারে ৫৬% ম্যাচেই অল ইন্ডিয়ান ডিফেন্সে আস্থা রেখেছে বেঙ্গালুরু। পরিসংখ্যান বলছে, মাত্র ১৪ গোল হজম করেছে ভারতীয় রক্ষণ , যা ক্লাবের এবারের মোট গোল হজমের ৪২ শতাংশ।
অ্যাওয়ে ম্যাচে পারফরমেন্স খারাপ বিএফসির
অবশ্য বেঙ্গালুরুর চিন্তার কারণ অ্যাওয়ে মাঠ। কারণ বেঙ্গালুরুর ৮০ শতাংশ ক্লিনশিটই এবারে এসেছে কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে। আর অ্যাওয়ে ম্যাচেই প্রায় দুই তৃতীয়াংশ গোল তাঁরা হজম করেছেন। আসলে জোভানোভিচকে নামাতে গেলে এডগার মেন্ডেজকে প্রথমার্ধে নাও নামানো যেতে পারে, সেক্ষেত্রে আবার সুনীলকে দিয়ে স্টার্ট করতে হবে। কিন্তু জারাগোজা পরের দিকে রায়ান উইলিয়ামস আর সুনীলের ফ্রেশ লেগ কাজে লাগিয়ে গোল তুলছেন। তাই স্ট্র্যাটেজিগত দিক থেকেই বিএফসি চাইছে ভারতীয় রক্ষণেই ভরসা রাখতে। সেক্ষেত্রে পেদ্রো কাপো এবং আলবার্তো নোগুয়েরাকে মাঝমাঠে রাখা যাচ্ছে। আর আক্রমণে পেরেইরা দিয়াজ ও এডগার মেন্ডেজকেও একসঙ্গে খেলানো যাবে।
মোহনবাগানের আক্রমণে দুই বিশ্বকাপার
তবে বেঙ্গালুরুর অল ইন্ডিয়ান ডিফেন্স কিন্তু মোহনবাগানের বিরুদ্ধে এই মরশুমে ১ গোল হজম করেছে যুবভারতীতে। সেই ম্যাচে লিস্টন কোলাসো গোল করেছিলেন। আরও একটা বিষয় ভাবাচ্ছে জারাগোজাকে, তা হল প্রতিপক্ষ দলে দুই বিশ্বকাপারের থাকা। আইএসএলের অন্য যে কোনও ক্লাবের থেকেই মোহনবাগানের অ্যাটাকিং লাইন ভয়ঙ্কর। পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে সেকথা। এই মরশুমে ৫০ গোল করা হয়ে গেছে মোহনবাগানের। সেখানে বেঙ্গালুরু খেয়েছে প্রায় ৩৩ গোল।
তাই চাইলেই ফাইনালের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অন ইন্ডিয়ান ডিফেন্স রাখা উচিত কিনা, সেই নিয়েও ভাবতে হচ্ছে বেঙ্গালুরুর স্প্যানিশ কোচকে। অনেক সময়ই কোচরা অ্যাটাক ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স ছক নিয়ে থাকে, তবে সেটা বেশি ব্যবহার হয় যখন দলে ফুটবলারের অভাব থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে বেঙ্গালুরু যেখানে বেশ ব্যালেন্সড সাইড, তাই সম্পূর্ণ ভারতীয় ডিফেন্স খেলানোর ঝঁকি কোচ নেবেন কিনা, তার উত্তর সময়ই দেবে।