জম্মু ও কাশ্মীরের রাজৌরি জেলার একটি গ্রামে গাড়ি তল্লাশির সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপককে হেনস্থার অভিযোগ উঠল কয়েকজন জওয়ানের বিরুদ্ধে। এই নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই সেনাবাহিনীর তরফ থেকে এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিয়াকত আলির অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাজৌরির নিয়ন্ত্রণ রেখার পাশে লাম গ্রামে গাড়ি তল্লাশির সময় সেনারা তাঁকে মারধর করে। নির্যাতিত অধ্যাপকের দাবি, তাঁর মাথায় আঘাত লেগেছে এবং একটি ভিডিয়োতে তাঁর মাথা থেকে রক্তক্ষরণ হতেও দেখা গিয়েছে।
এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনা নিয়ে চর্চা ও বিতর্ক শুরু হওয়ার পরে এই নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। তাতেই তদন্তের বিষয়ে জানানো হয়। সেনা জানিয়েছে, রাজৌরি জেলায় সেনা জওয়ানদের হাতে কয়েকজন ব্যক্তিকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এই সংবেদনশীল অঞ্চলে একটি গাড়িতে সন্ত্রাসীদের সম্ভাব্য গতিবিধি সম্পর্কে সেনাবাহিনীর ইনপুট ছিল। সেই অনুযায়ী তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছিল সেখানে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, জওয়ানরা গাড়ি আটকানোর পর ওই ব্যক্তি কর্তব্যরত জওয়ানদের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং তাঁদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করেন। তবে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। কোনও সেনা সদস্য অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনায় পেশাদারিত্ব ও শৃঙ্খলার সর্বোচ্চ মান সমুন্নত রাখতে সেনাবাহিনী অবিচল। এদিকে সেনা আরও বলেছে, ‘এই সংবেদনশীল অঞ্চলে সমাজের সকল অংশকে সম্মিলিতভাবে সেনাবাহিনীর সাথে সহযোগিতা করার অনুরোধ করা হচ্ছে।’
এদিকে অভিযোগ, ওই অধ্যাপক ও তাঁর কয়েকজন আত্মীয় তাঁদের এক এক আত্মীয়ের প্রি-ওয়েডিং অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে কালাকোটে ফিরছিলেন। নয়াদিল্লিতে কর্মরত ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটির (ইগনু) অধ্যাপক আলি এক্স-এ একটি পোস্ট লেখেন যে কোনও কারণ ছাড়াই তাঁকে ‘লাঞ্ছিত করা হয়েছে’। তিনি লেখেন, ‘আমার পুরো পরিবার ভারতীয় সেনাবাহিনীতে আছে। এটা নিয়ে আমি সবসময়ই গর্বিত। ইউনিফর্ম, সেবা, ত্যাগ নিয়ে গর্বিত। কিন্তু আজ আমি যা অনুভব করেছি তা সেই গর্বকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। কোনও কারণ ছাড়াই, কোনও প্রশ্ন ছাড়াই, আমাকে আক্রমণ করা হয়েছিল। তারা আমাকে মাথায় আঘাত করেছিল। এই সেনাকে আমি একসময় অন্ধভাবে বিশ্বাস করতাম। তবে এটি আমাকে একটি ভয়ঙ্কর সত্য উপলব্ধি করতে বাধ্য করেছিল: সিস্টেম যদি চায় তবে এটি যে কোনও মানুষকে আঘাত করতে পারে – প্রমাণ ছাড়াই, বিচার ছাড়াই। এমন কোনও ক্ষমা নেই যা এই ক্ষতটি মুছে ফেলতে পারে। শুধু একটাই প্রশ্ন থেকে যায়- ন্যায়বিচার কি এখন শুধু ইউনিফর্মের অধিকারে পরিণত হয়েছে?’