Long Read।  বক্সির তৈরি করা কমিটি কেন কয়েক ঘণ্টার মধ্যে খারিজ করলেন মমতা?

Spread the love

নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি সভার পর বৃহস্পতিবার ছিল তৃণমূলের প্রথম বড় বৈঠক। রাজ্যে ভুয়ো ভোটার ধরতে মমতার গড়ে দেওয়া কোর কমিটির বৈঠকে বৃহস্পতিবার দেখা যায়নি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যদিও সুব্রত বক্সির নেতৃত্বাধীন ওই কমিটির নামের তালিকায় দ্বিতীয় নামটি ছিল তাঁরই। ওই বৈঠকে অভিষেকের অনুপস্থিতিতে প্রতিটি জেলায় ভুয়ো ভোটার ধরতে একটি করে কোর কমিটি গঠন করে দেন সুব্রত বক্সিরা। কিন্তু রাত বাড়তেই সেই সমস্ত কমিটি খারিজ করে দেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রে অন্তত এমনটাই খবর পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সুব্রত বক্সির গঠন করা কমিটি কেন কয়েক ঘণ্টার মধ্যে খারিজ করে দিলেন মমতা? রাজনৈতিক বৃত্তে উঠে আসছে নানা সম্ভাবনার কথা। 

বৃহস্পতিবারের বৈঠকে মমতা – গঠিত কোর কমিটির সদস্যরা রাজ্যের প্রতিটি জেলায় ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত করতে ১টি করে কমিটি গঠন করে দেন। ব্যতিক্রম শুধু মাত্র বীরভূম। এছাড়া প্রতিটি জেলায় জেলা সভাপতির নেতৃত্বে ৪ জনের কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাত ৯টা নাগাদ জানা যায়, সেই সমস্ত কমিটি খারিজ করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। কমিটি গঠনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা খারিজ হয়ে যাওয়ার খবরে তৃণমূলের অন্দরেও শোরগোল শুরু হয়। প্রশ্ন ওঠে কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন দলনেত্রী? আর তাতেই উঠে এসেছে একাধিক সম্ভাবনার কথা। 

কেন খারিজ কমিটি?

১. তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্যওয়াড়ি কমিটি গঠনের ব্যাপারে কোনও তথ্য ছিল না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তাই তিনি কমিটি খারিজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তৃণমূলের একটি সূত্র দাবি করেছে, অনেকগুলি কমিটিতে সাংসদদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সামনেই সংসদের বাজের অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব। তাই বহু সাংসদ নিজের এলাকায় হাজির থাকতে পারবেন না। সেজন্য নতুন করে কমিটি গঠন করতে চান মমতা। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, মমতাকে না জানিয়ে সুব্রত বক্সি কমিটি গঠন করেছেন, এটা কি তৃণমূল নেতারাও বিশ্বাস করেন? আর সাংসদদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সমস্যা থাকলে বেছে বেছে সেই কমিটিগুলি বাতিল করা যেতে পারত। সমস্ত কমিটি কেন?

২. রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, তৃণমূলের মতো বিশৃঙ্খল দলে দলীয় কর্মীদের দিয়ে ভোটার লিস্ট সংশোধনের কাজ করানো একটু কঠিন। অনেকে বিষয়টায় গুরুত্বই দেয় না। অনেকের ঘুম ভাঙে শেষ বেলায়। তাই বিজেপির বিরুদ্ধে ভুয়ো ভোটার ঢোকানোর অভিযোগ তুলে দলীয় কর্মীদের দিয়ে ভোটার লিস্ট সংশোধনের কাজটা আগে ভাগে করিয়ে রাখতে চান মমতা। আর যে কোনও ভোট মেকানিজম সঠিক ভাবে চালাতে প্রথম শর্ত হল নিজের মতো করে ভোটার লিস্ট তৈরি করানো। বাম জমানাতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু বাম কর্মীরা ছিলেন অনেক নিয়মানুবর্তী। তৃণমূলের ক্ষেত্রে বিষয়টি তেমন নয়। কিন্তু এই বিষয়টিকে নিয়ে এর থেকে বেশি এগোতে চান না মমতা। তাই জেলাওয়াড়ি কমিটি গঠনে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন তিনি। 

৩. মমতার জেলাওয়াড়ি কমিটি খারিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠে আসছে আরও এক তত্ত্ব। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে যেহেতু বৃহস্পতিবারের বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হাজির ছিলেন না তাই সুব্রত বক্সির তৈরি কমিটির ওপর অনাস্থা প্রকাশ করেছেন তিনি। আগামী ১৫ মার্চ দলের জেলা সভাপতিদের নিয়ে পালটা ভার্চুয়াল বৈঠক ডেকেছেন তিনি। অভিষেকের অনাস্থাতেই সুব্রত বক্সিদের তৈরি কমিটি খারিজ করেছেন তৃণমূলনেত্রী। তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও ভাইপোর চাপের মুখে একাধিকবার নতি স্বীকার করতে হয়েছে মমতাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কলকাতা পুর এলাকায় গাড়ির পার্কিং ফি বাড়িয়ে প্রত্যাহার করতে হয়েছে পুরমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে। তবে সত্যিই অভিষেকের আবদারেই কমিটি বাতিল হয়েছে কি না তা জানা যাবে ভার্চুয়াল বৈঠকের দিন। সেদিন স্পষ্ট হবে ছবিটা। 

৪. বিজেপির দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ভোটার লিস্টে কারচুপির অভিযোগ যে ভিত্তিহীন তা বুঝতে পেরেছেন তৃণমূলনেত্রী নিজেই। তাঁর নির্দেশে তাঁর দলের নেতা মন্ত্রীরা সাত দিন ধরে ছোটাছুটি করে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় একই এপিক নম্বরে একাধিক ভোটার ঘটনা খুঁজে পেয়েছেন ঠিকই, তবে বৃহস্পতিবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের সঙ্গে সাক্ষাতে তার নির্দিষ্ট কোনও সংখ্যা বলতে পারেননি তাঁরা। তাতেই প্রশ্ন উঠছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে। সেটা বুঝেই জেলা স্তরের কমিটি খারিজ করে দিয়েছেন মমতা। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *