Manipur Latest Situation। মণিপুরে সময়ের মধ্যে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী খুঁজে পাবে BJP?

Spread the love

দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা জাতিগত হিংসার আবহে সম্প্রতি মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে অবশেষে সরে দাঁড়িয়েছেন বীরেন সিং। এই আবহে মণিপুরের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর খোঁজ শুরু করে দিয়েছে পদ্ম শিবির। আর এর জন্যে ইম্ফলে সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এদিকে চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে বিজেপি নেতৃত্ব নয়াদিল্লিতে কুকি-জো বিধায়কদের সাথে আলাদা করে দেখা করতে চলেছেন বলেও জানা গিয়েছে। বিজেপি নেতৃত্ব এমনক এক নেতাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন, যিনি মৈতৈ এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যকার এই চলমান হিংসা এবং সংঘাত মোকালিবা করতে পারবে।

এদিকে বিগত দিনে বীরেন সিংকে পদ থেকে সরাতে উঠে পড়ে লেগেছিলেন দলেরই একটা অংশ। পরপর দু’বার মণিপুরে নির্বাচনে জিতলেও রাজ্যে তাদের সংগঠনে চিড় ধরেছে এই জাতিত সংঘাতের কারণে। এই আবহে সম্প্রতি বিজেপির কয়েকজন বিধায়ক ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। বীরেন সিং সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হলে তাঁরা তা সমর্থন করতে পারেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এর জেরে সরকারের পতনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। এই আবহে বীরন পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ে দেখে শুনে পা ফেলতে চাইছে পদ্ম শিবির।

উত্তরপূর্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্র আপাতত ইম্ফলের এক হোটেলে আছেন। এর আগে বীরেন সিংয়ের পদত্যাগের সময়ও তিনি তাঁর সঙ্গে রাজ্যপালের কাছে গিয়েছিলেন। জানা গিয়েছে, সোমবার হোটেলের ঘরেই স্পিকার টি সত্যব্রত সিং, শিক্ষামন্ত্রী ওয়াই খেমচাঁদ, টিএইচ বিশ্বজিৎ, প্রাক্তন মন্ত্রী থ রাধেশ্যাম এবং মন্ত্রী আওয়াংবোই নিউমাইয়ের সঙ্গে দেখা করেন সম্বিত পাত্র। মনে করা হচ্ছে, বীরেন পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে এঁদের কাউকে। এদিকে বিধানসভা অধিবেশন বসার সাংবিধানিক সময়সীমা হল ১২ ফেব্রুয়ারি। সেদিনের মধ্যে সব জটিলতা কাটিয়ে না ওঠা গেলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে পারে মণিপুরে। উল্লেখ্য, সোমবর থেকেই মণিপুর বিধানসভার অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে ৫ থেকে ১০ জন বিধায়কের বিদ্রোহের আঁচ পেয়েছিল হাইকমান্ড। এই আবহে বীরেন সিং অবশেষে পদত্যাগ করেন।

এক বিজেপি বিধায়ক বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জানেন যে নতুন মুখ্যমন্ত্রীকে কেবল মেইতেই এবং কুকিদের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনই নয়, দলীয় ইউনিটকেও একত্রিত করার কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং কাজ করতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ২০১৯ সাল থেকে দলীয় ইউনিটে ভাঙন ধরেছে।’ এদিকে দাবি করা হচ্ছে, খেমচাঁদকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলে কুকিদের কোনও আপত্তি নাও থাকতে পারে। এই আবহে সম্বিত পাত্রের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় খেমচাঁদ বলেন, ‘দলের হাইকমান্ড যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমরা তা মেনে নেব। আমাদের লক্ষ্য রাজ্যে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা।’ পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাব দেন, ‘হাইকমান্ড যদি আমাকে প্রজেক্ট করে, আমি তা মেনে নেব।’

এদিকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে সম্ভাব্য অশান্তির আশঙ্কায় রবিবার সন্ধ্যা থেকে ইম্ফল জুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে জোরদার করা হয়েছে। উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই মণিপুরে কুকি এবং মৈতৈ জনজাতির মধ্যে সংঘাত বজায় রয়েছে মণিপুরে। গত ২০২৩ সালের ৩ মে থেকে জাতিগত হিংসার সাক্ষী মণিপুর। মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত ছিল। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি অবস্থা। এখনও পর্যন্ত কয়েক হাজার জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চূড়াচাঁদপুর, মোরে, কাকচিং এবং কাংপোকপি জেলা থেকে অধিকাংশ মানুষকে সরানো হয়েছে। এরই মধ্যে হিংসায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। প্রসঙ্গত, ইম্ফল উপত্যকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হল মৈতৈ জনজাতি। তবে তারা সম্প্রতি দাবি তুলেছিল যে তাদের তফসিলি উপজাতির তকমা দিতে হবে। তাদের এই দাবির বিরোধ জানিয়েছিল স্থানীয় কুকি-জো আদিবাসীরা। এদিকে হাই মণিপুর হাই কোর্টে এই নিয়ে মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় হাই কোর্ট নির্দেশ দেয়, মৈতৈদের নাম তফশিলি উপজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব কি না, তা খতিয়ে দেখুক রাজ্য। এই নির্দেশিকার পরই জো-কুকি সম্প্রদায়ের মানুষরা প্রতিবাদে নামেন। এই আবহে ২০২৩ সালের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন একটি মিছিলের আয়োজন করেছিল। সেই মিছিল ঘিরেই হিংসা ছড়িয়ে পড়ে চূড়াচাঁদপুর জেলায়। পরে অবশ্য হাই কোর্ট সংরক্ষণ নিয়ে নিজেদের সেই পর্যবেক্ষণ ফিরিয়ে নেয়।

তবে এখনও মণিপুরে হিংসার আগুন নেভেনি। এদিকে তফশিলি উপজাতির ইস্যুর পাশাপাশি সংরক্ষিত জমি এবং সার্ভে নিয়েও উত্তাপ ছড়িয়েছিল সেই রাজ্যে। এই আবহে গত ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসেই চূড়াচাঁদপুর জেলায় মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সভাস্থলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরামের সদস্যরা। এদিকে এই জেলা থেকে কুকি আদিবাসী বনাম মৈতৈদের এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য জেলাতেও। আর এখনও পর্যন্ত সেই হিংসা প্রাণ হারিয়েছেন কয়েকশো সাধারণ মানুষ। বাফার জোন করে মৈতৈ এবং কুকিদের ভিন্ন এলাকায় রাখা হয়েছে। তার মধ্যেও মাঝে মাঝেই বাঁধছে সংঘাত। একে অপরের দিকে আঙুল তুলছে দুই জনজাতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *