Masoud Pezeshkian against Hizab। হিজাব বিরোধী ইরানের নয়া রাষ্ট্রপতি মাসুদ 

Spread the love

ইরানের(Iran) নবম রাষ্ট্রপতি হলেন মাসুদ পেজেশকিয়ান(Masoud Pezeshkian)। হিজাব বিরোধী তিনি, উন্নত দৃষ্টিভঙ্গি রাখেন। কট্টরপন্থী সাঈদ জলিলীকে পরাজিত করে ইরানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়ের লেখক হতে পারেন এই ৬৯ বছর বয়সী উদারপন্থী নেতা পেজেশকিয়ান। ইরানের নতুন রাষ্ট্রপতির আরও অনেক অনন্য পরিচয় রয়েছে, যা ইরানের রাজনীতিতে এক আশার আলো জাগিয়ে তোলে।

এর আগেও রাষ্ট্রপতি পদে দাঁড়িয়েছিলেন পেজেশকিয়ান

২০০৬ সালে, পেজেশকিয়ান তাব্রিজের প্রতিনিধিত্বকারী একজন আইন প্রণেতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে তিনি ডেপুটি পার্লামেন্ট স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে, মাসুদ পেজেশকিয়ান এই প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। ২০১১ সাল থেকে, তিনি এই লাইনআপে রয়েছে। সেই বছরেই প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন করেছিলেন, কিন্তু পরে নিজের প্রার্থীতা যদিও প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। পেজেশকিয়ান একজন মধ্যপন্থী নেতা এবং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির ঘনিষ্ঠ বলেও মনে করা হয়। আবার ২০২২ সালেও একই পথে এগোতে চেয়েছিলেন, কিন্তু রাইসিকেই সহজ জয় দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।

পেজেশকিয়ানের রাষ্ট্রপতি হওয়া ভারত-ইরান সম্পর্কে কী প্রভাব ফেলতে পারে

ভারত ও ইরানের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আগাগোড়াই শক্তিশালী। পেজেশকিয়ান রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে এই সম্পর্কগুলি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। একজন সংস্কারবাদী নেতা হিসাবে পেজেশকিয়ান, অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়াতে চান, পারমাণবিক চুক্তিতে ফিরে যেতে চান এবং হিজাব আইনের কম প্রয়োগ চান বলে নিজেই জানিয়েছিলেন পেজেশকিয়ান। বিশেষ করে দুই দেশের সহযোগিতায়, গুরুত্বপূর্ণ চাবাহার বন্দর তাদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে। ভারত এই প্রকল্পে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। চাবাহার বন্দর টার্মিনালের উন্নয়নের জন্য ১২০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত। ইরানে অবকাঠামো প্রকল্পের জন্যও ২৫০ মিলিয়ন ডলার ক্রেডিট লাইন অফার করেছে। চাবাহার বন্দরটি পাকিস্তানকে বাইপাস করে মধ্য এশিয়ার সঙ্গে ভারতকে যুক্ত করবে। এমতাবস্থায় পেজেশকিয়ান ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে প্রাধান্য দেবেন না, এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম। ক্ষমতায় যেই আসুন না কেন, ইরানের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তনের কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই আশা রেখেছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইআরএনএর এর মতে, পাজাশকিয়ান ১৬.৪ মিলিয়ন ভোট পেয়েছেন। যেখানে জলিলি পেয়েছেন ১.৩৬ কোটি ভোট। এর আগেও, ইরানে এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ইব্রাহিম রাইসি আবার দেশটির রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু, দুর্ভাগ্যক্রমে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যু হয়। তাই দেশের গদিতে আবারও শাসক খুঁজে দেওয়ার জন্য, এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পেজেশকিয়ানের অনন্য পরিচয়

১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৪ সালে, উত্তর-পশ্চিম ইরানের মাহাবাদে একজন আজেরি বাবা এবং একজন কুর্দি মায়ের কোলে পেজেশকিয়ান জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি আজেরি ভাষায় কথা বলেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে ইরানের বিশাল সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর পক্ষেও কাজ করেছেন। অনেকের মতো, তিনিও ইরান-ইরাক যুদ্ধে কাজ করেছিলেন, যুদ্ধের ময়দানে মেডিকেল দল পাঠিয়েছিলেন।

মাসুদ পেজেশকিয়ান একজন সার্জন, ইরানের তাবরিজ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ছিলেন। ১৯৯৪ সালে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় স্ত্রী ফাতেমেহ মাজিদি এবং একটি কন্যার মৃত্যুর পর ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ডাক্তার আবার বিয়ে করেননি। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে একা বড় করেছেন।পেজেশকিয়ান প্রথমে দেশের উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং পরে সংস্কারবাদী রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ খাতামির প্রশাসনের অধীনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসাবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন। পেজেশকিয়ান ১৯৯৭ সালে ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

পেজেশকিয়ান হিজাবের বিরোধিতা করেন

পেজেশকিয়ান একজন উদার ও সংস্কারবাদী নেতা হিসেবেও পরিচিত। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক বক্তৃতায় তিনি বেশ কয়েকবার হিজাবের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময়, পেজেশকিয়ান কঠোর হিজাব আইন শিথিল করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। বহুবার বলেছিলেন যে তিনি যে কোনও ধরণের নৈতিক পুলিশিংয়ের বিরুদ্ধে।

২০২২ সালে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পরে, ইরানের আইনপ্রণেতা মাসুদ পেজেশকিয়ান লিখেছিলেন যে হিজাবের জন্য একটি গ্রেফতার গ্রেপ্তার করা এবং তারপরে তার মৃতদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা, ইসলামী প্রজাতন্ত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। উল্লেখ্য, তাঁর এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি, এবারের নির্বাচনে তাঁকে জয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছিল।

বারবার আমেরিকার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন তিনি

বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছিলেন। ২০১৯ সালে একটি আমেরিকান ড্রোনকে গুলি করার জন্য গার্ডের প্রশংসা করে বলেছিলেন যে এটি আমেরিকানদের মুখে একটি শক্তিশালী ঘুষির মতো। তাদের কাছে এটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে যে আমাদের দেশ কখনওই আত্মসমর্পণ করবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *