MEA on Tahawwur Rana extradition। ‘মুম্বই হামলার মূল অভিযুক্তের প্রত্যর্পণ নিয়ে আমেরিকায় কিছু আইনি ইস্যু রয়েছে…’

Spread the love

২০০৮ সালের মুম্বই সন্ত্রাসবাদী হামলার মূল অভিযুক্ত তাহাউর রানার প্রত্যর্পণের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার জন্য ভারত মার্কিন কর্তৃপক্ষের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে ভারত। শুক্রবার এমনটাই জানানো হল ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফ থেকে। এর আগে রানার প্রত্যর্পণ বিরোধী জরুরি আবেদন নাকচ করে দিয়েছে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট। আর এখন তাহাউর রানা নাকি নিজের প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আবেদন পুনর্নবীকরণের চেষ্টা করেছেন প্রধান বিচারপতি জন জি রবার্টস জুনিয়রের আদালতে।

গতকাল বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালকে রানা ইস্যুতে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আপনারা রানার প্রত্যর্পণ সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের মন্তব্য শুনেছেন। ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী মোদীর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় যৌথ বিবৃতিতেও এই বিষয়টির উল্লেখ করা হয়েছিল। তার প্রত্যর্পণের জন্য প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার জন্য আমরা মার্কিন সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি আমরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিছু আইনি ইস্যু রয়েছে যার উত্তর আমি দিতে পারছি না, কিন্তু সেগুলো দেখে নেওয়া হবে। কিন্তু আমাদের ধারণা… তার প্রত্যর্পণ হওয়া উচিত।

সম্প্রতি, ২৬/১১ মুম্বাই সন্ত্রাসবাদী হামলার অভিযুক্ত তাহাউর রানার প্রত্যর্পণ বিরোধী জরুরি আবেদন খারিজ করে দেয় মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট। রানা তার আবেদনে দাবি করেছিল, মুসলিম এবং পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত হওয়ার কারণে ভারতে নির্যাতন করা হবে তাকে। তবে তার সেই দাবি ধোপে টেকেনি মার্কিন শীর্ষ আদালতে। এই রায়ের পর এখন রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের পথ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

২০০৮ সালের মুম্বই জঙ্গি হামলায় নাম জড়িয়েছিল কানাডার ব্যবসায়ী তাহাউর রানার। এহেন রানাকে ভারতে আনার চেষ্টা চলছিল। তবে ২০২৩ সালে মার্কিন আদালতে রানাকে ভারতে নিয়ে আসার ওপর স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, মার্কিন সরকার এবার তাহাউর রানাকে ভারতের হাতে তুলে দিতে পারবে। এই আবহে এই জঙ্গিকে ভারতে নিয়ে আসতে মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে ভারত। পরে মোদীর মার্কিন সফরকালে রানার প্রত্যর্পণে অনুমোদন দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপরই ফের মার্কিন শীর্ষ আদালতে শেষ চেষ্টা করে রানা। তবে তার সেই চেষ্টায় জল ঢেলে দেয় মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট।

উল্লেখ্য, ভারত ও আমেরিকা দুই দেশের মধ্যে ১৯৯৭ সালে প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই আবহে ভারতের অনুরোধে আমেরিকার প্রশাসন রানাকে গ্রেফতার করেছিল। ২০১১ সালে শিকাগোর আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল রানা। তার বিরুদ্ধে লস্কর-ই-তইবা জঙ্গিদের সাহায্য করার অভিযোগ ছিল। প্রসঙ্গত, তাহাউর রানার বন্ধু পাকিস্তানি-আমেরিকান নাগরিক ডেভিড কোলম্যান হেডলি। এই আবহে ২০২৩ সালের মে মাসে একটি মার্কিন আদালত পাক বংশোদ্ভূত রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের পক্ষে রায় দিয়েছিল। তবে সেই রায়ের বিরুদ্ধে রানা আবেদন করেছিল। তারপর রানার প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া থমকে গিয়েছিল।

তবে ২১ জানুয়ারি তাহাউর রানার প্রত্যর্পণে ছাড়পত্র দেয় আমেরিকার শীর্ষ আদালত। প্রসঙ্গত, তাহাউর রানা ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় ধরেই সওয়াল করে আসছিল নয়াদিল্লি। ভারতের দাবি, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডার এই নাগরিকই হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার ঘটনায় অন্যতম চক্রী। তাই ভারতের বিচারব্যবস্থার অধীনেই তাঁর বিচার হওয়া উচিত। তবে গত ১৬ ডিসেম্বর মার্কিন সলিসিটর জেনারেল এলিজাবেথ বি প্রিলগার মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করেন, যাতে শীর্ষ আদালত রানার আবেদন খারিজ করে দেয়। এদিকে রানার আইনজীবী ২৩ ডিসেম্বর সরকারের প্রস্তাব চ্যালেঞ্জ করেন এবং সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন জানান, যাতে এই মামলায় রানার রিট পিটিশন গ্রহণ করা হয়। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত মার্কিন শীর্ষ আদালত রানার আবেদনের বিরুদ্ধেই রায় ঘোষণা করে দেয়। আর এবার রানার শেষ আশাও ভেঙে দেয় আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বরের মুম্বই হামলায় প্রাণ গিয়েছিল ১৬৬ জনের। যাঁদের মধ্যে ছ’জন মার্কিন নাগরিকও ছিলেন। হামলা চালিয়েছিল ১০ জন পাকিস্তানি জঙ্গি। যাদের মধ্যে ৯ জনকে নিকেশ করা হয়। পরে মামলার পরে ফাঁসি হয় আজমল কাসভের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *