কয়েকদিন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প(Donald Trump) দাবি করেছিলেন, শুল্ক কমাতে সম্মত হয়েছে ভারত। এরই সঙ্গে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘অবশেষে নয়াদিল্লির পর্দা ফাঁস করতে পেরেছি শুল্ক নিয়ে।’ তবে এবার এক সংসদীয় প্যানেলের সামনে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, ট্রাম্প সঠিক কথা বলেননি। মোদী সরকারের বক্তব্য, ‘শুল্ক কমানো নিয়ে ট্রাম্পকে কোনও প্রতিশ্রুতি দেয়নি ভারত।’ এর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘ভারত আমাদের ওপর অনেক শুল্ক চাপায়। অনেক। ভারতে কিছু বিক্রি করা যায় না। তবে এখন তারা শুল্ক কমাতে সম্মত হয়েছে। কারণ অবশেষে কেউ অন্তত তাদের পর্দা ফাঁস করছে।’
এপ আগে লাগাতার ভারতীয় শুল্ক নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করে গিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই সব মন্তব্য এমন এক সময় করছেন, যখন ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল নিজে ওয়াশিংটন সফরে ছিলেন। মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লাটনিকের সঙ্গে পারস্পরিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কথাবার্তা বলছিলেন পীযূষ গোয়েল। এদিকে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এই ইস্যুতে বলেছিলেন, ‘আমেরিকার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি দুই দেশের মধ্যে ব্যবসাকে আরও বাড়াতে পারে। দুই দেশের মধ্যে শুল্ক যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে পারে। এই চুক্তি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে উভয় সরকারই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য ভারত-আমেরিকা যাতে একে অপরের দেশে পণ্য এবং পরিষেব বিক্রি করতে পারে।’
এর আগে সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময়ও ভারতের শুল্ক ইস্যু নিয়ে সরব হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প(Donald Trump)। এদিকে মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড যেখানে চাইছেন যে কৃষি ক্ষেত্রে আমেরিকাকে যাতে ভারত তাদের বাজারে প্রবেশাধিকার দেয় এবং শুল্ক কমায়। সেখানে ট্রাম্প ভিনদেশ থেকে আসা কৃষিপণ্যকে ‘নোংর’ আখ্যা দিয়ে আক্রমণ শানিয়েছিলেন।
এদিকে সম্প্রতি আবার গাড়ি, সেমিকন্ডাক্টর, ফার্মা পণ্যের ওপর শুল্ক চাপার ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্প। এপ্রিল মাসের ২ তারিখেই সেই সব পারস্পরিক শুল্ক কার্যকর করতে পারে ট্রাম্পের সরকার। বিভিন্ন অটোমোবাইল প্রস্তুতকারক সংস্থা যাতে আমেরিকায় গাড়ি তৈরি করতে শুরু করে, এর জন্যেই এই নয়া শুল্ক আরোপের পথে হাঁটা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এরই মাঝে অবশ্য তাঁর ‘ডান হাত’ ইলন মাস্ক ভারতে টেসলার কারখানা চালু করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। এর আগে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের আগে ‘প্রতিশোধমূলক শুল্ক’ আরোপের ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্প। তিনি বলেছিলেন, চড়া শুল্কের কারণে ভারতে ব্যবসা করা অত্যন্ত কঠিন। সাধারণত বিশ্বের যে কোনও দেশের তুলনায় মার্কিন পণ্যের উপরে বেশি শুল্ক ধার্য করে ভারত। সেই পরিস্থিতিতে এবার থেকে ভারত মার্কিন পণ্যের উপরে যে হারে শুল্ক চাপাবে, সেই হারেই ভারতীয় পণ্যের উপরে শুল্ক ধার্য করা হবে।
অপরদিকে এই সবের মাঝেই অপরদিকে সম্প্রতি মার্কিন বোরবন হুইস্কির ওপর শুল্ক কমিয়েছে ভারত। এর আগে মার্কিন বোরবন হুইস্কির ওপর ১৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করছিল ভারত। তা এবার ৫০ শতাংশ কমিয়ে ১০০ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে জনপ্রিয় মার্কিন ব্র্যান্ড জিম বিমের দাম কমতে পারে ভারতে। রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এই শুল্ক কমানোর নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। এর আগে এবারের বাজেটে মোটরসাইকেলের ওপরে শুল্ক কমায় ভারত। এর ফলে মার্কিন ব্র্যান্ড হারলে ডেভিডডসনের আমদানির ক্ষেত্রে ভারতে আরও ১০ শতাংশ শুল্ক কমেছে। উল্লেখ্য, এর আগে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত হারলে ডেভিডসনের ওপরে ৫০ শতাংশ শুল্ক কমিয়েছিল। আর এবারের বাজেটে তা আরও কিছুটা কমানো হয়।