গত বছরের ৫ অগস্ট বাংলাদেশে শেখ হাসিনা(Sheikh Hasina) সরকারের পতনের পর থেকে এখনও পর্যন্ত সেদেশে কট্টরপন্থীদের যে ক্রমশ উত্থান হচ্ছে, এমন অভিযোগ নানা মহলেই বারবার তোলা হয়েছে। এবার কার্যত সেই সুরই প্রতিধ্বনিত হল বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা তথা পেশাদার চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর করা একটি ফেসবুক পোস্টে।
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের একাংশ এই বিষয়টিকে হাসিনা পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে তৈরি মতবিরোধের প্রতিবাদ হিসাবে তুলে ধরলেও, ফারুকীর ফেসবুক পোস্টের ভাষা থেকেই স্পষ্ট, যেভাবে হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশবাসী – বিশেষত মহিলাদের উপর কট্টরপন্থা চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে, মানুষে-মানুষে এবং নারী-পুরুষে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে, তাতে তিনি অত্যন্ত বিরক্ত।
তিনি তাঁর সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘জুলাইয়ে যখন হাসিনার খুনী বাহিনির বিরুদ্ধে লড়াই করতেছিলেন তখন কি পাশের জন ছেলে না মেয়ে, দাড়িওয়ালা না দাড়ি ছাড়া, হিজাব না জিন্স, বিএনপি না জামাত- এই খোঁজ নিছিলেন কেউ?’
ফারুকী তাঁ পোস্টে স্পষ্টই ‘বিবিধের মাঝে মিলন’-এর বার্তা দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘বাংলাদেশে জুলাই আসছিলো বহু মত, বহু পথ, বহু স্বভাব, বহু পোষাকের দেশ হিসাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্যই।’
শুক্রবারই (৭ মার্চ, ২০২৫) ঢাকার একাংশে খিলাফত অর্থাৎ ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছে একটি নিষিদ্ধ সংগঠন। কট্টরপন্থীরা গত কয়েকমাস ধরে ইসলামের দোহাই দিয়ে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করার চেষ্টা করছে, নীতি পুলিশি করছে। আর এর ফলে সবথেকে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বাংলাদেশের মেয়েরা।
ইতিমধ্য়েই তাঁদের উপর নানা ফতোয়া জারি করা হয়েছে এবং হচ্ছে। নানাভাবে বাংলাদেশি মহিলাদের হেনস্থা ও নির্যাতন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে। ফারুকী এর তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। পাশাপাশি, সমাজের একাংশও যে এর প্রতিবাদ করছে, তাতেও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি।
ফারুকী তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্য়াকাউন্টের পোস্টে লিখেছেন, ‘এইখানে মোরাল পুলিশিংয়ের দায়িত্ব কাউকে দেয়া হয় নাই। দাড়ি-টুপি-বোরখাকে যখন স্টিগমাটাইজ করা হইছিলো তখন প্রতিবাদ করছিলো বাংলাদেশ। আজকে উল্টা দিকে যখন স্টিগমাটাইজ করা হচ্ছে তখনও বাংলাদেশকে প্রতিবাদ করতে দেখে আশাবাদী হই।’
ফারুকী অত্যন্ত জোরের সঙ্গে লিখেছেন, বাংলাদেশে কোনও দিন কট্টর পুরুষতন্ত্র বা নারীবিরোধী মনোভাবকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না। তাঁর লেখা অনুসারে, ‘সকল প্রকার মিসোজিনিকে সোজা বাংলায় ‘না’! আগেও না, আজকেও না, ভবিষ্যতেও না।’