মুর্শিদাবাদর ধুলিয়ানে শান্তি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল ১৮ এপ্রিল। স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং তৃণমূল সাংসদ-বিধায়করা ছিলেন সেই বৈঠকে। আর সেই বৈঠকেই পুলিশের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন স্থানীয় মন্দির কমিটির ট্রাস্টি সদস্য ষষ্ঠীচরণ ঘোষ। এরই সঙ্গে তিনি দাবি করেন সামশেরগঞ্জে যাতে বিএসএফের স্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করা হয়। রিপোর্ট অনুযায়ী, জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান, সাগরদিঘির তৃণমূল বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস, সামশেরগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক আমিরুল ইসলাম, রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলামরা ছিলেন এই শান্তি বৈঠকে।
জানা গিয়েছে, শান্তি বৈঠকে স্থানীয় মন্দির কমিটির ষষ্ঠীচরণ ঘোষ বলেন, ‘বাংলাদেশের খুবই কাছে অবস্থিত সামশেরগঞ্জ। এখানে জঙ্গি বা মৌলবাদীরা ছোট ছোট শিশুদের ব্রেনওয়াশ করছে। তাই এখানে এই ধরনের হামলা হল। পুলিশ কী করেছে প্রত্যেকের জানা। তাই এখানে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে থাকতে হবে। প্রশাসনের উচিত এখানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর স্থায়ী ক্যাম্প করার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।’ তাঁর এহেন মন্তব্যে চাপানউতোর তৈরি হয় শান্তি বৈঠকে। পরে ষষ্ঠীচরণের এই দাবি প্রসঙ্গে তৃণমূল বিধায়ক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘গণতান্ত্রিকভাবে প্রত্যেকেরই নিজের কথা বলার অধিকার আছে। এখন আমরা এলাকার শান্তি ফেরানোর বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। বাকিটা প্রশাসন যা দেখার দেখবে।’
প্রসঙ্গত, সহিংসতা কবলিত মুর্শিদাবাদ জেলার পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। এদিকে ধুলিয়ান এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে এখনও। উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় বিক্ষোভের জেরে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল ১১ এপ্রিল থেকে। এই হিংসার জেরে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন কিশোর আছে। সে গত ১১ এপ্রিল গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। এদিকে ১২ এপ্রিল সামশেরগঞ্জে বাবা-ছেলেকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন স্থানীয়রা। এই আবহে ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দেহ উদ্ধার করতে গেলে তাদের বাধা দেওয়া হয়েছিল। পরে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করলে তা না নেওয়ার ঘোষণা করেন নিহতের পরিবার। এদিকে এলাকায় শান্তি ফেরাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে বিএসএফ।
এদিকে ১২ এপ্রিল ধুলিয়ান পুরসভাতে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল। সেদিন একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল এবং পরে সেখানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। ধুলিয়ানে একটি শপিংমলেও লুটপাট চালানো হয়েছিল। এদিকে ফারাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলামের দাদা আলির বাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকী বিধায়ককেও হেনস্থা করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। এছাড়া জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুরের অফিসেও হামলা চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। এদিকে মুর্শিদাবাদে হিংসার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে এখনও পুলিশে আস্থা রাখতে পারছেন না স্থানীয়দের অনেকেই।