মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের সমাধি সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে বজরং দল এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সোমবার দফায় দফায় হিংসা ছড়িয়েছে মহারাষ্ট্রের নাগপুরে(Nagpur)। ১২টি গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি অগ্নিসংযোগ, দোকানপাট ভাঙচুরে ঘটনা ঘটেছে। আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ। এছাড়াও, একটি ক্রেন ও দুটি জেসিবিতে আগুন লাগানো হয়েছে। বেশ কিছু লোককে তলোয়ার হাতে নিয়েও হামলা চালাতে দেখা গিয়েছে। নাগপুরে এই হিংসার ঘটনায় ৫০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরং দলের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে আরও কারা জড়িত? তা জানতে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ এবং সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলিও খতিয়ে দেখছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নাগপুরে আর নতুন করে হিংসার ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে শহরের পুলিশ কমিশনার রবীন্দ্র কুমার সিঙ্গাল জানিয়েছেন, ‘পরিস্থিতি এখন শান্তিপূর্ণ। প্রায় ১১টি থানা এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’ তিনি জানিয়েছে, এই ঘটনায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য মহারাষ্ট্র ও গোয়ার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ইনচার্জ সেক্রেটারি গোবিন্দ শেন্ডে এবং অন্যদের বিরুদ্ধে গণেশপেঠ থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
অন্যদিকে, এই গোটা ঘটনায় ৫টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ কমিশনার। তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত ৫০ জনেরও বেশি লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও গ্রেফতার করা হবে। তিনি সাধারণ মানুষকে ভয় পাওয়ার বার্তা দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, এই পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কমিশনার।
তিনি জানান, হিংসা শুরু হওয়ার প্রথম থেকেই অফিসাররা উপস্থিত ছিলেন। সেই কারণে ৩৩ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। তিনি আরও জানান, বিএনএসএসের ১৬৩ ধারার অধীনে নাগপুরের বেশ কয়েকটি অংশে কারফিউ জারি করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে কোতোয়ালি, গণেশপেঠ, তহসিল, লাকাডগঞ্জ, পাচপাওলি, শান্তিনগর, সক্করদারা, নন্দনবন, ইমামওয়াড়া, যশোধরানগর এবং কপিলনগর থানার বেশ কিছু এলাকা।
এদিকে, সোমবার নাগপুরে সংঘটিত এই হিংসার জন্য সমাজবাদী পার্টির বিধায়ক আবু আজমিকে দায়ী করেছেন মহারাষ্ট্রের বিজেপি বিধায়ক রাম কদম। তিনি বলেন, আবু আজমিই এর জন্য দায়ী। আজমি ঔরঙ্গজেবের প্রশংসা করেন। এরফলে জনরোষ আরও বেড়ে যায়।
উল্লেখ্য, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মহলের চিটনিস পার্ক এলাকায় হিংসা শুরু হয়। সেখানে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া হয়। পরে কোতোয়ালি এবং গণেশপেঠেও হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যার দিকে হিংসা ব্যাপক আকার ধারণ করে। যারফলে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ঘটনায় মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবিস মানুষকে শান্ত থাকার বার্তা দেন। একইসঙ্গে এই হিংসাকে তিনি পূর্বপরিকল্পিত বলে অভিযোগ তোলেন। এদিকে, এই ঘটনায় সরব হয়েছে মহারাষ্ট্র কংগ্রেস। দোলের রাজ্য প্রধান হর্ষবর্ধন সাপকাল রাজ্য স্বরাষ্ট্র বিভাগের সমালোচনা করে এই হিংসাকে প্রশাসনের ব্যর্থতা বলে কটাক্ষ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, যে হিংসার আগে মন্ত্রীরা ইচ্ছাকৃতভাবে উস্কানিমূলক বক্তৃতা দিয়েছিলেন।