ওয়াকফ হিংসায় ঘরছাড়াদের সঙ্গে কথা বলতে গতকালই মালদায় গিয়েছিলেন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যরা। সেখানে আতঙ্কিত মহিলদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের কষ্টের কথা শোনেন কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রাহাতকর। ঘরছাড়াদের সঙ্গে নিজের কথোপকথন নিয়ে পরে বিজয়া পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করেন, ‘মহিলাদের সঙ্গে কীভাবে এসব হতে পারে?’ টিভি৯ বাংলার রিপোর্ট অনুযায়ী, নির্যাতিতা ও ঘরছাড়াদের সঙ্গে দেখা করার পর বিজয়া বলেন, ‘তাঁদের সঙ্গে যা যা হয়েছে, সেসব মহিলারা আমাকে জানিয়েছেন। মহিলারা যা বললেন, তা কল্পনারও বাইরে। যৌন নিপীড়ন পর্যন্ত হয়েছে তাঁদের সঙ্গে। আমি তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। আরও কথা বলতে হবে। মহিলাদের সঙ্গে কীভাবে এসব হতে পারে?’
এদিকে জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার ঘরছাড়াদের সঙ্গে কথা বলে দাবি করেন, মুর্শিদাবাদ থেকে ঘরছাড়া হওয়া মহিলারা কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইছেন। তাঁর কথায়, ‘মহিলারা সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাইছেন। দুষ্কৃতীরা নাকি ওকানে মেয়েদের বলেছিল, বাড়িতে থাকলে ধর্ষণ হয়ে যাবি। চলে যা। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা যা যা করার করব।’ এদিকে মুর্শিদাবাদের হিংসা কবলিত এলাকাগুলি পরিদর্শন করবেন জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা।
এদিকে কমিশনের সফর নিয়ে বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, ‘তাঁদের গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা উচিত, মুর্শিদাবাদে যা ঘটেছে তা চোখ খুলে দেওয়ার মতো… পুরো দেশ দেখছে কী ঘটছে… জিহাদিরা সনাতনীদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট এবং মন্দির পুড়িয়ে দিচ্ছে… এটা কি সিরিয়া, আফগানিস্তান নাকি পাকিস্তান?… আমাদের এনআইএ তদন্তের প্রয়োজন… মানুষের জানা উচিত ঠিক কী ঘটেছিল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা কী ছিল।’ প্রসঙ্গত, মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ হিংসায় ঘরছাড়া হয়ে মালদায় এখনও রয়েছেন কয়েকশো জন। গতকাল সেখানে গিয়েছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যরাও। এদিকে রাজ্যপালও সেখানে গিয়ে নির্যাতিতদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এদিকে আজ রাজ্যপালেরও মুর্শিদাবাদে ঘোরার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় বিক্ষোভের জেরে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল ১১ এপ্রিল থেকে। এই হিংসার জেরে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন কিশোর আছে। সে গত ১১ এপ্রিল গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। এদিকে ১২ এপ্রিল সামশেরগঞ্জে বাবা-ছেলেকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন স্থানীয়রা। এই আবহে ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দেহ উদ্ধার করতে গেলে তাদের বাধা দেওয়া হয়েছিল। পরে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করলে তা না নেওয়ার ঘোষণা করেন নিহতের পরিবার। এদিকে এলাকায় শান্তি ফেরাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে বিএসএফ।
এদিকে ১২ এপ্রিল ধুলিয়ান পুরসভাতে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল। সেদিন একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল এবং পরে সেখানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। ধুলিয়ানে একটি শপিংমলেও লুটপাট চালানো হয়েছিল। এদিকে ফারাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলামের দাদা আলির বাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকী বিধায়ককেও হেনস্থা করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। এছাড়া জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুরের অফিসেও হামলা চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। এদিকে মুর্শিদাবাদে হিংসার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।