কলকাতা হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে আরজি কর চিকিৎসক খুন সংক্রান্ত যে মামলা চলছে, তা তাঁরা চালিয়ে যেতে চান। এই মর্মে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নাকে চিঠি লিখলেন নির্যাতিতার মা-বাবা। এই আবহে উচ্চ আদালতে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে দায়ের করা মামলাটি যাতে চালু থাকে, তার জন্যে দেশের প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এই আবহে কী হতে পারে? আইনজ্ঞদের মতে, সুপ্রিম কোর্টে এই নিয়ে লিখিত আবেদন করা হলেও বিষয়টি প্রধান বিচারপতির এজলাসে মেনশন করতে হবে। তারপরই শীর্ষ আদালত এই নিয়ে অনুমতি দিলেই হাই কোর্ট নতুন দায়ের করা এই মামলা শুনতে পারবেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ।
এর আগে সম্প্রতি আরজি কর ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় নতুন করে তদন্ত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। তবে পরে সেই মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন তাঁদের আইনজীবী করুণা নন্দী। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালের অগস্ট মাসে সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যে মামলাটি শুরু করেছিল, তাতেই ‘ইন্টারভেনশন অ্যাপ্লিকেশন’ হিসেবে এই আবেদন করেছিলেন নির্যাতিতার মা-বাবা। সেই সময় দেশের শীর্ষ আদালতে আরজি করের নির্যাতিতার বাবা-মায়ের পক্ষের আইনজীবীকে জানান, কলকাতা হাই কোর্টে এই সংক্রান্ত একটি মামলা চলছে। এই অবস্থায় এই মামলাটির শুনানি সুপ্রিম কোর্টে হবে কি না, তা জানতে চান প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না।
এই আবহে মামলাকারী পক্ষের আইনজীবীকে হলফনামা জমা দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ। শীর্ষ আদালতের তরফ থেকে বলা হয়, ইতিমধ্যে আরজি করের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। তাকে আমৃত্যু কারাবাসের সাজা দিয়েছেন শিয়ালদা দায়রা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। তাই সেই দিকটি মাথায় রেখে আদালতে হলফনামা জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। পাশাপাশি তিনি পরামর্শ দেন, নির্যাতিতার বাবা-মা এবার নতুন করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে পারেন। পরে নির্যাতিতার মা-বাবার আবেদনটি প্রত্যাহার করা হয় শীর্ষ আদালত থেকে।
এর আগে সিবিআই তদন্ত নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলে উচ্চ আদালতের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের বেঞ্চে সেই আবেদন করা হয়েছিল। সেই সময় উচ্চ আদালতের বিচারপতি নির্যাতিতার পরিবারের সেই আবেদন শুনতে চাননি। কারণ সুপ্রিম কোর্টেও আরজি কর মামলা চলছিল। এই আবহে শীর্ষ আদালতেও একই আবেদন করেন নির্যাতিতার মা-বাবা। তা নিয়েই ২৯ জানুয়ারি শুনানি হয়েছিল শীর্ষ আদালতে। এই শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘পরিবারের আবেদনের বিষয়গুলি বিতর্কসাপেক্ষ। তা নিয়ে দু’তরফের সওয়াল শুনতে হবে। শুনানি করলে মূল মামলায় তার যথেষ্ট প্রভাব থাকবে। ফলশ্রুতিও দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে।’ এদিকে তিনি এও প্রশ্ন করেন, ‘কলকাতা হাই কোর্টে একটি আবেদন করা হয়েছে। অনুমতি নিয়ে আসুন, এখানে মামলা রাখতে চাইছেন না কি কলকাতা হাই কোর্টে?’
উল্লেখ্য, গত ২০ জানুয়ারি শিয়ালদা আদালতে আরজি কর মামলায় চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা শোনান বিচারক অনির্বাণ দাস। এদিকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমনা দিতে হবে সঞ্জয় রায়কে। এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি আদালতের তরফ থেকে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৩ (ধর্ষণ), ৬৪ (ধর্ষণের সময় এমন ভাবে আঘাত করা, যাতে মৃত্যু হয়), ১০৩ (১) নং (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এই আবহে সঞ্জয়কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০,০০০ টাকা জরিমানা, ৬৬ ধারায় আওতায় আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ১০৩ (১) ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবনের সাজা ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন বিচারক। এদিকে বিচারক নির্দেশ দেন, নির্যাতিতার পরিবারকে ১৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাষ্ট্রকে। বিচারক বলেছিলেন, এই মামলা বিরলের থেকে বিরলতম নয়।