৯ অগস্ট আরজি করের ইমারজেন্সি ভবনের চতুর্থ তলায় সেমিনার রুম থেকে পাওয়া যায় তরুণী চিকিৎসকের রক্তাক্ত দেহ। এর দু’দিন আগেই নাকি এক মত্ত ব্যক্তি তরুণী চিকিৎসকের কাছে চলে গিয়েছিল তাঁর বিশ্রামের সময়। আনন্দবাজার পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে মামলার শুনানি চলাকালীন সেই ঘটনার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন গোলাম আজম নামে এক হাউজ স্টাফ। এদিকে অভিযোগ, সেই মত্ত ব্যক্তিকে নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছিল চেস্ট মেডিসিন বিভাগের প্রধানের কাছে। তবে তা নিয়ে কোনও তদন্ত সেই সময় আর হয়নি।
গোলাম জানান, ঘটনার ২ রাত আগে চেস্ট মেডিসিন বিভাগের সেমিনার রুমেই রাতে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন সেই তরুণী চিকিৎসক। অভিযোগ, সে দিন মত্ত অবস্থায় সেখানে কেউ ঢুকে পড়েছিল। সেই সময় সেই তরুণী প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। এদিকে গোলামের বয়ান অনুযায়ী, ৮ অগস্টও চেস্ট মেডিসিন বিভাগের প্রসিডিয়োর রুমের বেঞ্চে এক বহিরাগত শুয়ে ছিল। তরুণী চিকিৎসককে সেই ব্যক্তির বিষয়ে জানিয়েছিলেন গোলাম নিজেই। সেই সময় তরুণী চিকিৎসক এক গ্রুপ ডি কর্মীকে ডেকে সেই ব্যক্তিকে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। তবে সেই ব্যক্তি কে ছিলেন? তা নিয়ে কোনও উত্তর তদন্তকারীদের কাছে নেই। সেই বিষয়টি তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন বলেও জানা যায়নি রায়ের প্রতিলিপি থেকে।
এদিকে আদালতে গোলামের বয়ান অনুযায়ী, ঘটনার রাতে ৯টা নাগাদ কাজে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। রাত ১১টা ১০ মিনিটে তাঁকে ফোন করেন প্রথম বর্ষের পিজিটি অর্ক সেন। সেই সময় গোলাম কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এর আরও ১০ মিনিট পরে অর্ক ফের ফোন করে গোলামকে জানান যে খাবার চলে এসেছে। এই আবহে গোলামকে চাকর তলায় ডাকেন তিনি। নিজের বয়ানে গোলাম জানান, তরুণী চিকিৎসক সেই রাতে নিজে একটি অ্যাপ থেকে খাবার অর্ডার করেছিলেন। অর্কই তরুণী চিকিৎসককে ফোন করে করে ডাকেন। ১১টা ৪০ মিনিট নাগাদ তরুণী চার তলায় যান। সেই রাতে সেমিনার রুমে অর্ক, সৌমিত্র হাজরা এবং সেই তরুণীকে দেখতে পান গোলাম। এরপর সেখানে শুভদীপ সিংহ মহাপাত্র এসেছিলেন। গোলামের দাবি, সেই রাতে ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত খাওয়া দাওয়া চলেছিল। ১টা ৫ পর্যন্ত এরপর সেথানে বসে গল্প চলে। এর আগে মোবাইলে অলিম্পিকে জ্যাভলিন থ্রো দেখেছিলেন তাঁরা সকলে।
এরপর নাকি ওয়ার্ডে ফিরে গিয়ে অর্ককে এক রোগীর বিষয়ে ফোন করেছিলেন গোলাম। রোগীর অবস্থর অবনতি হওয়ায় আর্টারিয়াল ব্লাড গ্যাস পরীক্ষা করানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন অর্ক। ২টো ৪০ মিনিট নাগাদ অর্ক নাকি ফের চারতলায় গিয়েছিলেন। এরপর ২টো৫০ মিনিট নাগাদ গোলাম সেই টেস্টের রিপোর্ট দেখাতে সেমিনার রুমে গিয়েছিলেন। তখন সেই ঘরের দরজা ভেজানো ছিল। অর্কের নামে ডাক দিলেও তিনি কেউ সাড়া দেয়নি। এদিকে গোলাম নাকি তখন দেখেছিলেন সেমিনার রুমে ডায়াসে ম্যাট্রেস পেতে শুয়ে আছেন সেই তরুণী। পরে স্লিপ রুমে অর্কের খোঁজ পান গোলাম। তখন সেখানে সৌমিত্রও ছিলেন। এরপর অর্ক নাকি সেই রিপোর্ট দেখে সংশ্লিষ্ট রোগীকে ছুটি দিতে বলেন। তারপর নাকি গোলাম রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ হোস্টেলে চলে যান। সকালে তিনি হাসপাতাল ছেড়ে বের হন। পরে বেলায় তিনি জানতে পারেন, আরজি করে চিকিৎসক ‘আত্মহত্যা’ করেছেন।
এদিকে শুনানির সময় নিজের বয়ানে অর্ক দাবি করেছিলেন সেই রাতে ১টা ১৫ মিনিটে খাওয়া শেষ হয়েছিল। এরপর তিনি স্লিপ রুমে গিয়ে এক রোগীকে দেখেন। তারপর রাত ২টো কি সোয়া ২টো নাগাদ তিনি একবার সেমিনার রুমে এসেছিলেন নিজের ব্যাগ নিতে। তারপর সৌমিত্রকে ফোন করে ডেকে নিয়ে রাতটা স্লিপ রুমেই কাটিয়েছিলেন তাঁরা। সেই রাতে নাকি তরুণীকে মাথা পর্যন্ত লাল কম্বল ঢেকে শুয়ে থাকতে দেখেছিলেন অর্ক। তারপর সকাল ৯টা বেজে গেলেও সেই তরুণী চিকিৎসক ডিউটিতে যোগ না দেওয়ায় অর্ক তাঁকে ফোন করেন। তবে তিনি ফোন না তোলায় সেমিনার রুমে যান অর্ক। সেখানে তিনি তখন তরুণী চিকিৎসকের রক্তাক্ত দেহ দেখেন এবং সবাইকে ডেকে আনেন। তবে এই ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে, কেন অগস্টের গরমে কম্বল জড়িয়ে শুয়ে থাকবেন তরুণী? অর্ক এবং গোলামের ঘটনাপ্রবাহেও কিছুটা পার্থক্য আছে।