ওভাল অফিসে বসেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামনে সুর চড়িয়ে কথা বলেন ইউক্রেনের রাষ্ট্রপ্রধান। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রীতিমতে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় ভলোদিমির জেলেনস্কির। আর এই সব দেখে রাশিয়া বেশ ‘মজা’ পেয়েছে। জেলেনস্কিকে ‘বদমাশ’ আখ্যা দিয়ে পুতিনের দেশ দাবি করল, ট্রাম্প অনেক সংযম দেখিয়েছেন এই পরিস্থিতিতে। এই নিয়ে রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জাখারোভা টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করে লেখেন, ‘জেলেনস্কির একগাদা মিথ্যা কথার মধ্যে সবচেয়ে বড় মিথ্যাটি ছিল, হোয়াইট হাউসে তিনি দাবি করেছেন, ২০২২ সালে কিয়েভ সরকার একা ছিল। কোনও সমর্থন পায়নি। ট্রাম্প এবং ভান্স যে কীভাবে এই বদমাশকে (জেলেনস্কি) না মেরে ছিলেন, সেই সংযম এক অলৌকিক ঘটনা।’
উল্লেখ্য, ২৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে বৈঠকে মুখোমুখি হয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেই বৈঠকেই উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় দু’জনের। এই আবহে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন বাতিল হয়ে যায়। এদিকে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, তাতেও সই করেননি ট্রাম্প ও জেলেনস্কি। সেই বৈঠকের পরে এক বিবৃতি জারি করে ট্রাম্প আবার দাবি করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অপমান করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
উল্লেখ্য, ইউক্রেন যুদ্ধে প্রথম থেকেই ওয়াশিংটন ডিসি-কে পাশে পেয়েছিলেন জেলেনস্কি। তবে বিগত বছরগুলিতে মার্কিন মসনদে ছিলেন ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন। ২০২৫ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে সেই সব বদলে যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব নেন ট্রাম্প। এবং তিনি ইউক্রেনের বদলে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকতে থাকেন। এমনকী একটা সময়ে জেলেনস্কিকে ‘একনায়ক’ আখ্যা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ট্রাম্প এও ইঙ্গিত করেছিলেন যে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্যে আদতে জেলেনস্কি দায়ী। এই আবহে ইউক্রেন থেকে মার্কিনি সাহায্যের অর্থ ফেরত চেয়েছিলেন। আগামীতে ইউক্রেনকে সাহায্য করবেন না বলেও জানিয়ে দেন ট্রাম্প। এরই মধ্যে পূর্ব ইউরোপে শান্তি ফেরাতে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসেছিল আমেরিকা। যদিও সেই আলোচনায় ঠাঁই পায়নি ইউক্রেন। এত কিছুর মাঝেই ২৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউজে মুখোমুখি হন ট্রাম্প এবং জেলেনস্কি। সেই সাক্ষাতের দিকে নজর ছিল গোটা বিশ্বের।
এদিকে এই বৈঠক চলাকালীন ওভাল অফিসে জেলেনস্কিকে কড়া কথা শোনান ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন জেলেনস্কি’। এদিকে জেলেনস্কি পালটা বলেছিলেন, ‘পুতিনের মতো কোনও খুনিকে কোনও ছাড় দেওয়া ঠিক নয়। তাঁর সঙ্গে কোনও সমঝোতা করা যাবে না।’ এদিকে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে জড়িয়ে পড়েছিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সও। তিনি জেলেনস্কিকে বলেন, ‘আপনি একবারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন না। ওভাল অফিসে বসে বিতণ্ডায় জড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জেলেনস্কি অসম্মান করেছেন আপনি।’ জবাবে গলা চড়িয়েই জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি বহুবার আমেরিকার জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।’