একথা ঠিক যে কিছু মহিলা ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ৪৯৮এ নম্বর ধারার (যা ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বা বিএনএস-এর ৮৫ নম্বর ধারার সমতুল্য) অপব্যবহার করছেন এবং বিবাহিত পুরুষ ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের উপর রীতিমতো অত্যাচার করছেন। কিন্তু, শুধুমাত্র এই কারণে বা এই যুক্তিতে মহিলাদের গার্হস্থ্য হিংসার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য যে আইন তৈরি করা হয়েছিল, তাকে বদলে ফেলা যাবে না। একটি জনস্বার্থ মামলা প্রসঙ্গে তার পর্যবেক্ষণে এমনই মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিংয়ের বেঞ্চ তার পর্যবেক্ষণে জানায়, ‘যেহেতু শুধুমাত্র এমন কিছু ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে আইপিসি ৪৯৮এ এবং বিএনএস ৮৫ নম্বর ধারার অপব্যবহার করা হয়েছে, তাতে কি এটা বলা যায় যে সব মহিলাই তাঁদের স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের হেনস্থা করেন? এটা মোটেও সামগ্রিকভাবে সত্যি হতে পারে না। ব্যাপক বা বিস্তৃতভাবে যদি দেখা যায়, তাহলে দেখা যাবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মহিলারাই তাঁদের শ্বশুরবাড়িতে গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হন। তাই আদালতকে প্রত্যেকটা মামলা সেই ঘটনার প্রেক্ষিতেই বুঝতে হবে।’
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘জনশ্রুতি’ নামে একটি এনজিও-র করা জনস্বার্থ মামলার ভিত্তিতেই সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণ সামনে এসেছে।
ওই অলাভজনক সংস্থার দাবি ছিল, ইদানীংকালে যেভাবে সংশ্লিষ্ট আইনের অপব্যবহার করা হচ্ছে, বিশেষ করে বধূ নির্যাতনের মিথ্যা মামলা রুজু করা হচ্ছে, বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে স্বামীর কাছ থেকে অন্য়ায্য় ও বিপুল পরিমাণের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করা হচ্ছে, তা বন্ধ হওয়া দরকার। এক্ষেত্রে তাই শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়েছিল ওই সংস্থার তরফে।
ওই সংস্থার তরফে যে আইনজীবী আদালতে সওয়াল করেন, তাঁর বক্তব্য ছিল – আইপিসি ৪৯৮এ এবং বিএনএস ৮৫ নম্বর ধারা দু’টিকে কেবলমাত্র মহিলাদের সুরক্ষার স্বার্থে ব্যবহার না করে, এই ধারা দু’টিকে নারী ও পুরুষ উভয়ের স্বার্থেই ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা হোক। এককথায়, লিঙ্গবৈষম্য দূর করে এই আইন সমস্ত ধরনের বৈবাহিক গার্হস্থ্য হিংসার ক্ষেত্রেই প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া হোক। যাতে এই আইন আগামী দিনে আক্রান্ত নারীর পাশপাশি আক্রান্ত পুরুষকেও সুরক্ষা প্রদান করতে পারে।
এর প্রেক্ষিতেই শীর্ষ আদালত বলে, কয়েকটি ঘটনার জন্য কখনও এভাবে সমস্ত মহিলাদের কাঠগড়ায় তুলে আইন বদলে দেওয়া সম্ভব নয়। বদলে, আদালতকে যেটা করতে হবে, তা হল – প্রত্য়েকটি মামলা স্বতন্ত্রভাবে বিশ্লেষণ ও বিচার করতে হবে।
মামলাকারী সংস্থা সংশ্লিষ্ট দু’টি ধারায় সংশোধনী আনারও দাব তোলে। তার জবাবে আদালত জানিয়ে দেয়, ‘সেই এক্তিয়ার কেবলমাত্র আইনসভার রয়েছে। আদালতের কথায়, ১৪২ কোটি জনতার যে প্রতিনিধিরা আইনসভায় বসে রয়েছেন, এক্ষেত্রে একমাত্র তাঁরাই ঠিক করতে পারেন, আইনের কাঠামো কেমন হবে। সাংবধানিক আদালত হিসাবে আমরা কেবলমাত্র তখনই হস্তক্ষেপ করতে পারি, যদি দেখা যায় সেই আইনি কাঠামোয় কোনও ফঁকফোকর থেকে গিয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট সংস্থার আরও দাবি ছিল, খোরপোষের মামলাগুলি ৬০ দিনের মধ্যে শেষ করা বাধ্যতামূলক করা হোক। এর প্রেক্ষিতে পালটা আদালত প্রশ্ন তোলে, ‘আপনারা কি জানেন এই নিয়ম কার্যকর করতে হলে আরও কত দেওয়ানি আদালত তৈরি করে কতজন বিচারককে নিয়োগ করতে হবে?’ মামলাকারীর সমস্ত বক্তব্য শোনার পর সুপ্রিম কোর্ট এই জনস্বার্থ মামলাটি খারিজ করে দেয়।