সন্তানদের পড়াশোনার জন্য লোন নিয়েছিলেন বাবা। শোধ করতে না পারায় লোনের রিকভারি এজেন্টরা এসে ক্রমাগত হেনস্থা করছিলেন সারা পরিবারকেই। শেষ পর্যন্ত কোনও উপায় না দেখে আত্মহত্যা করেছেন একই পরিবারের তিন জন, স্বামী স্ত্রী ও তাঁদের ১৮ বছর বয়সী মেয়ে। জানা গিয়েছে, নিহতদের নাম সঞ্জীব রানা, বয়স ৪৮ বছর। তাঁর স্ত্রী প্রেমবতী, বয়স হয়েছিল ৪৫ বছর। এই দম্পতির ১৮ বছর বয়সী মেয়ের নাম পায়েল।
ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের হাপুরে কাপুরপুর এলাকার সাপনাভাত গ্রামে। একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্বামী-স্ত্রী ও তাঁদের ১৮ বছরের মেয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে খবর। গ্রামবাসীরা জানান, ব্যাঙ্কের ঋণ পরিশোধ করতে না পারায়, রিকভারি এজেন্টরা ক্রমাগত তাঁদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছিলেন। এরপরেই কোনও রাস্তা না পেয়ে আত্মঘাতী পদক্ষেপ করেছেন বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। এমনটাই জানিয়েছে পুলিশ।
পুরো ঘটনাটি কী ঘটেছে
সূত্রের খবর, সঞ্জীব রানার ছেলে রিংকু গাজিয়াবাদে এমবিএ পড়ছেন, তাঁর বোন পায়েল ছিলেন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। মা প্রেমবতী, বাবা সঞ্জীব ও ভাই পিন্টু পরিশ্রম করে সংসারের খরচ চালাতেন। প্রায় পাঁচ মাস আগে, বাবা রিংকুকে এমবিএ-তে ভর্তির জন্য মিরাট রোডে অবস্থিত একটি ফাইন্যান্স কোম্পানি থেকে ৫ লক্ষ টাকা লোন নিয়েছিলেন। এ জন্য বাবা বাড়িও বন্ধক রেখেছিলেন। লোন পরিশোধের জন্য মাসে মাসে বড় অঙ্কের টাকা করে কিস্তি দিতে হত। তিন মাস ধরে জমাও করা হয়েছিল কিস্তির পরিমাণ।কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে গত দুই মাস ধরে সঞ্জীব কিস্তি জমা দিতে পারেননি। এ কারণে ফাইন্যান্স কোম্পানির রিকভারি এজেন্টরা প্রতিদিন তাঁর বাড়িতে এসে কিস্তি জমা দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। অনেক সময় গ্রামবাসীদের সামনেই গালিগালাজ করে পুরো পরিবারকে অপমান করেছেন তাঁরা। কিস্তি জমা দিতে বিলম্বের জন্য প্রতিদিন ১,১৮০ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে।
এরপর, ৩০ অগস্ট রিকভারি এজেন্টরা রিংকুকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখেছিল। কিস্তি না দিলে ছেলেকে জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়েছিল। দম্পতির অনুরোধে, প্রায় চার ঘণ্টা পর ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর ৩১শে অগস্ট এজেন্টরা কিস্তি মেটানোর জন্য দুই দিন সময় দিয়ে যান। আর এতটা চাপ সামলাতে পারেনি পরিবার।
রিংকুর বাবা সঞ্জীব রানা, মা প্রেমবতী ও বোন পায়েল বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন। ঘটনার সময় রিংকু কোচিং সেন্টারে পড়াতে গিয়েছিলেন। ওদিকে ভাই পিন্টু কোনও কাজে বুলন্দশহর জেলার গুলাভাথিতে গিয়েছিলেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকেই স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করেন গ্রামবাসীরা। সেখান থেকে তাঁদের মিরাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রেফার করা হয়। যদিও এরপরও শেষ রক্ষা হয়নি। অবশেষে তাঁদের মৃত্যু হয়। পুলিশ এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে এ ব্যাপারে এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।