এ কেমন প্রতিবাদ? শনিবারের (১২ এপ্রিল, ২০২৫) ঘটনায় এই প্রশ্নই তুলছেন মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ থানা এলাকার ধুলিয়ান মোড়ে অবস্থিত একটি শপিং মলের কর্মী ও আধিকারিক থেকে শুরু করে স্থানীয় দোকানদার এবং ব্যবসায়ীরা। কারণ, ওয়াকফ-প্রতিবাদের মধ্যেই এদিন ওই শপিং মলে লুটপাট, ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। সেই ছবি ইতিমধ্য়েই সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
উল্লেখ্য, সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে আন্দোলনের জেরে শুক্রবার (১১ এপ্রিল, ২০২৫) দুপুরের পর থেকে উত্তেজনা ছড়াতে শুরু করে মুর্শিদাবাদ জেলার সামশেরগঞ্জ, সুতিতে। পরে সেই উত্তেজনাই কার্যত গোটা এলাকাকে রণক্ষেত্রে পরিণত করে। শনিবার ওই এলাকা ছিল থমথমে। অন্যদিকে, এদিন সকাল থেকে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ধুলিয়ান।
অভিযোগ, গোষ্ঠী সংঘর্ষ চলাকালীনই স্থানীয় একটি শপিং মলে ঢুকে পড়ে একদল উন্মত্ত জনতা। তারা শপিং মলের একের পর এক বিভাগে ঢুকে পড়ে ইচ্ছা মতো লুটপাট, ভাঙচুর শুরু করে! এই ঘটনার খবর পৌঁছতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ঠিকই, কিন্তু ততক্ষণে সারা শপিং মলই লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে।
আচমকা এমন হামলায় উদ্ভ্রান্ত হয়ে পড়েন মলের কর্মী ও আধিকারিকরা। এই ঘটনায় আর্থিক ক্ষতি যেমন হয়েছে, তেমনই নিরাপত্তা ও প্রতিবাদের ধরন নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন আক্রান্তরা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই শপিং মলটি ছাড়াও এলাকার বেশ কয়েকটি দোকানেও ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এই অশান্তির জেরে ধুলিয়ান মোড় সংলগ্ন ১২ নম্বর জাতীয় সড়কে যানচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, দুই গোষ্ঠীর মধ্যে যখন সংঘর্ষ চলছিল, সেই সময় বোমাবাজি ও গুলি চালানোরও শব্দ পেয়েছন তাঁরা। শেষমেশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়ে উন্মত্ত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ।
এদিকে, শুক্রবারের তাণ্ডবের পর শনিবার একেবার থমথমে ছিল সামশেরগঞ্জ। এখানে-ওখানে পড়ে ছিল ধ্বংসের চিহ্ন। পোড়া বাস, গাড়ি থেকে অ্য়াম্বল্য়ান্স – সবকিছুরই ধ্বংসস্তূপ জানান দিচ্ছিল, বড় কোনও অঘটন ঘটে গিয়েছে। সুতিতেও ছবিটা ছিল একইরকম। এদিন পুলিশের পাশাপাশি বিএসএফ জওয়ানদেরও ভারী বুটের শব্দ তুলে উপদ্রুত এলাকায় টহল দিতে দেখা যায়। ইতিমধ্যেই হিংসা ছড়ানো ও হিংসায় মদত দেওয়ার অভিযোগে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মূলত সুতি ও সামশেরগঞ্জ থেকেই পাকড়াও করা হয়েছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিশ।
অন্যদিকে, বিএসএফ-এর পক্ষ থেকে বাহিনীর সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি ও জনসংযোগ আধিকারিক নীলোৎপল কুমার পাণ্ডে জানিয়েছেন, ওয়াকফ প্রতিবাদের জেরে শুক্রবার মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিএসএফ-এর সহযোগিতা চাওয়া হয়। সেই মতোই সঙ্গে সঙ্গে ফোর্স পাঠানো হয়।