আগুনের গোলার মতো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ। আটলান্টিকের বুকে ‘স্প্ল্যাশডাউন’। সবশেষে ২৮৬ দিন পরে ‘স্বাধীন’ হয়ে একরাশ হাসি। ‘ঘরের মেয়ে’ সুনীতা উইলিয়ামসের ‘ঘরে’ ফেরার প্রতিটা মুহূর্ত আবেগি কলমে লেখা থাকল। আর সেই মুহূর্তটার জন্য বহুদিন ধরে অপেক্ষা করছিলেন সুনীতা এবং তাঁর সহ-নভোশ্চর বুচ উইলমোর। কিন্তু স্টারলাইনার মহাকাশযানের গোলযোগ এবং বিভিন্ন টালবাহানার জেরে নির্ধারিত সময়ের থেকে ২৭৮ দিন বেশি তাঁদের মহাকাশে কাটাতে হল। আটদিনের ঝটিকা সফরে ২০২৪ সালের ৫ জুন স্টারলাইনারে চেপে মহাকাশে গিয়েছিলেন সুনীতা এবং বুচ। আর ২৮৬ দিন মহাকাশে কাটিয়ে ২০২৫ সালের ১৮ জুন (ফ্লোরিডার সময় অনুযায়ী) পৃথিবীতে নেমে এলেন তাঁরা। ফ্লোরিডার টালাহাসি উপকূল ববাবর ‘স্প্ল্যাশডাউন’ হয়।
‘ফ্রিডম’ মহাকাশযানেই মিলল স্বাধীনতা
আর পৃথিবীতে ফেরার মুহূর্তটার সূচনা হয়েছিল মঙ্গলবার রাত ১ টা ৫ মিনিটে (ফ্লোরিডার স্থানীয় সময় অনুযায়ী এবং ইংরেজি মতে মঙ্গলবার)। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার নভোশ্চর নিক হেগ এবং রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থার সদস্য আলেক্সজান্ডার গর্বুনোভের সঙ্গে স্পেসএক্সের ড্রাগন মহাকাশযানে (স্পেসএক্স ক্রিউ-৯ মিশন) চাপেন সুনীতা এবং বুচ। মঙ্গলবার রাত ১ টা ৫ মিনিটে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথিবীর উদ্দেশে রওনা দেন স্পেসএক্সের মহাকাশযান। যেটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ফ্রিডম’।
পৃথিবীতে প্রবেশ, প্যারাশ্যুট খোলা, স্প্ল্যাশডাউন
আর সেই ‘ফ্রিডম’ মহাকাশযান পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে মঙ্গলবার বিকেল ৫ টা ৫১ মিনিট নাগাদ (স্থানীয় সময়)। কমিয়ে ফেলা হয় গতি। প্রথম দফায় প্যারাশ্যুট খুলে যায় বিকেল ৫ টা ৫৩ মিনিটে। এক মিনিট পরেই দ্বিতীয় দফার প্যারাশুট খুলে যায়। আর তারপর ঠিক বিকেল ৫ টা ৫৭ মিনিটে প্যারাশ্যুটে ভাসতে-ভাসতে একেবারে ধীরগতিতে আটলান্টিকের বুকে নেমে আসে ড্রাগন ‘ফ্রিডম’ মহাকাশযান। যা বিজ্ঞানীদের পরিভাষায় ‘স্প্ল্যাশডাউন’ হিসেবে পরিচিত।
সেপ্টেম্বরের পরে মার্চে ফের খুলল দরজা!
ড্রাগন ‘ফ্রিডম’-র সেই ‘স্প্ল্যাশডাউন’-র পরে বোটে করে আসে উদ্ধারকারী দল। প্রোটোকল মেনে যাবতীয় পদক্ষেপ করা হয়। একটা সময় ধীরে-ধীরে উদ্ধারকারী জাহাজে তুলে নেওয়া হয় মহাকাশযানকে। খুলে ফেলা হয় মহাকাশযানের দরজা। যা শেষবার খোলা হয়েছিল সেই সেপ্টেম্বরে, যখন পৃথিবী থেকে রওনা দিয়েছিল স্পেসএক্সের ড্রাগন মহাকাশযান।
তিন নম্বরে বের করে আনা হয় সুনীতাকে
সেই দরজা দিয়ে প্রথমেই ধরে-ধরে বের করে আনা হয় হেগকে। তারপর রাশিয়ার মহাকাশচারীকে বের করে আনা হয়। তিন নম্বরে বেরিয়ে আসেন সুনীতা। উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের সাহায্য নিয়ে ধরে-ধরে বেরিয়ে আসেন ৫৯ বছরের ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী। একগাল মুখে হাসি নিয়ে হাতও নাড়েন। তারপর স্ট্রেচারে বসিয়ে তাঁকে নিয়ে চলে যাওয়া হয়। আর একদম শেষে বুচকে বের করে আনেন উদ্ধারকারীরা।
সেখান থেকে তাঁদের হেলিকপ্টারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হিউস্টনে। নাসার বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে তাঁদের আপাতত কয়েকটা দিন থাকতে হবে। মানিয়ে নিতে হবে পৃথিবীর সঙ্গে। সুনীতারা নিঃসন্দেহে চাইবেন যে ওই দিনগুলো যেন খুব তাড়াতাড়ি কেটে যায়। আর তাঁরা যেন দ্রুত বাড়ি ফিরতে পারেন
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ফ্লোরিডায় মঙ্গলবার বিকেল ৫ টা ৫১ মিনিট মানে ভারতে সময় হল বুধবার রাত ৩ টে ২১ মিনিট। ভারতীয় সময় অনুযায়ী, রাত ৩ টে ২৭ মিনিটে ‘স্প্ল্যাশডাউন’ হয়েছে মহাকাশযানের।