আপাতত এনআইএ হেফাজতে আছে ২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী তাহাউর রানা। এই পাকিস্তানি-কানাডিয়ান জঙ্গিকে টানা জেরা করে চলেছেন তদন্তকারীরা। এই আবহে রানা নাকি ‘কথা বলতে’ শুরু করেছে ভারতীয় তদন্তকারীদের সামনে। রানার পাক হ্যান্ডলার এবং জঙ্গি সংগঠনগুলির সঙ্গে যোগ নিয়ে রানাকে জেরা করছেন এনআইএ। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের মুম্বই হামলায় ধৃত দ্বিতীয় ব্যক্তি হল এই তাহাউর রানা। দীর্ঘ আইনি এবং কূটনৈতিক লড়াইয়ের পর রানাকে ভারতে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে মোদী সরকার।
এদিকে জানা গিয়েছে, তাহাউরের জেরার ভিডিয়োগ্রাফি হচ্ছে। মুম্বই হামলার আগে লস্কর জঙ্গি, পাক সেনা এবং আইএসএআই কর্তাদের সঙ্গে তাহাউর রানার কী কথা হয়েছিল, তা জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা। তবে রানার থেকে কী জানা যাচ্ছে, সেই বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ এনআইএ। এই বিষয়ে এক সিনিয়র আধিকারিক হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, ‘তদন্ত এখন খুবই সংবেদনশীল মোড়ে। এই আবহে এহেন অপারেশনাল তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করা যাবে না।’ এদিকে সেই আধিকারিক আরও বলেন, ‘প্রয়োজনে ১৮ দিনের পরও রানাকে হেফাজতে রাখার জন্যে আবেদন জানাবে এনআইএ।’
এদিকে ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ডেভিড কোলম্যান হেডলি মুম্বইয়ে নজরদারি চালাতে ‘ইমিগ্রেশন ল সেন্টার’ নামক অফিসকে কাজে লাগাত। এটা তাহাউর রানার অফিস ছিল। সেই অফিসে অবশ্য অন্য কোনও কাজ হত না। সেই অফিস চালানোর জন্যে টাকা কোথা থেকে আসত, তা জানারও চেষ্টা চলছে। এদিকে এক এনআইএ অফিসার জানিয়েছেন, টানা ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা করে জেরা করা হবে তাহাউর রানাকে। এর ফাঁকেই তাহাউর রানাকে খাওয়ার, প্রার্থনা বা শৌচকর্মের জন্যে ব্রেক দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছেন, তাহাউর রানার সঙ্গে আর পাঁচজন গ্রেফতার হওয়া আসামির মতোই আচরণ করা হচ্ছে। তার জন্যে কোনও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়নি। তাহাউর এক কপি কোরান চেয়েছিল। তা তাকে দেওয়া হয়েছে। নিজের সেলে বসেই দিনে পাঁচবার নমাজ পড়ছে রানা। এদিকে রানার ওপর সেলে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে। তাকে কাগজ ও কলম দেওয়া হয়েছে। তবে কলম দিয়ে সে নিজের ক্ষতি যাতে না করতে পারে, সেদিকে কড়া নদর রাখা হচ্ছে। এদিকে প্রতি ৪৮ ঘণ্টায় রানার মেডিক্যাল চেকআপের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়া একদিন পর পর দিল্লি লিগাল সার্ভিস অথরিটির আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পাবে রানা।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে হেডলি মুম্বইতে এসে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সেখানে অফিস খুলেছিল রানার ইমিগ্রেশন ব্যবসার নাম করে। সেখানে একজন সচিবও নিয়োগ করেছিল সে। এরই সঙ্গে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। এই ব্যবসাকে ‘আসল’ দেখানোর জন্যে সকল চেষ্টা করেছিল হেডলি। সেই সময় নিজেকে রানার সংস্থার দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রধান হিসেবে দাবি করেছিল হেডলি। এদিকে সংস্থার বিজ্ঞাপন দেখে অনেক সময়ই মানুষ আসত হেডলির কাছে। তখন সে নাকি রানার কাছে তাদের রেফার করে দিত। এদিকে মানুষের থেকে টাকাও নিত হেডলি। তবে সেই ব্যক্তি ভিসা না পেলে সেই টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হত। এই আবহে সেই অফিসের খরচ কোথা থেকে আস, সেই বিষয়ে জানতে চাইছেন তদন্তকারীরা।