TMC women MLAs on RG Kar row। ‘মানুষের ক্ষোভ মমতার কানে পৌঁছচ্ছে না’

Spread the love

আরজি কর কাণ্ডের আবহে তৃণমূল কংগ্রেস রাজনৈতিক ভাবে অস্বস্তিতে আছে। বিশেষ করে শহুরে এলাকায় যেভাবে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে রাস্তায় নেমেছে, তাতে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে শাসক শিবিরের। তবে ৯ অগস্ট ঘটনার পরপর কিন্তু গোটা পরিস্থিতি প্রায় সামলে নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়েছিলেন তৎকালীন কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে নিয়ে। তবে ১৪ অগস্ট রাত দখলের কর্মসূচি থেকেই হাওয়া বদলাতে শুরু করে। প্রথমে সেই কর্মসূচির বিরোধিতায় নেমেছিলেন তৃণমূলেরই একাংশ। পরে সেই রাতে আরজি করে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। সেই থেকে পুলিশের ওপরেও ক্ষোভ বাড়তে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এরপর থেকে উদয়ন গুহ, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী, স্বপন দেবনাথ সহ একাধিক নেতামন্ত্রী আলটপকা মন্তব্য করেছেন আন্দোলন নিয়ে। তবে দলেরই বেশ কয়েকজন মহিলা বিধায়ক মনে করছেন, পুলিশ সঠিক ভাবে নিজের কাজটা করেনি আরজি করে। পাশাপাশি তাঁদের অনেকেরই এও মনে হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানে সবটা কথা যাচ্ছে না।

পশ্চিমবঙ্গে শাসলকদলের ৩৫ জন মহিলা বিধায়কের অধিকাংশের সঙ্গেই কথা বলার চেষ্টা করেছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। এই বিধায়কদের সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই থেকেছেন। কেউই বিদ্রোহী হননি। সবাই আবার মুখ খোলেননি। রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৭ জন মহিলা বিধায়ক নিজেদের মতমত প্রকাশ করেছেন। ১০ জন মন্তব্য করতে চাননি বিষয়টি নিয়ে। অনেকেই চিকিৎসকদের আন্দোলন প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন। তবে এর মধ্যে অনেকেরই আবার মত, মানুষের ক্ষোভের কারণ বৈধ। 

  • কুশমণ্ডির বিধায়ক রেখা রায় যেমন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘রাস্তায় এবং মানুষের মনে, বিশেষ করে নারীদের মনে স্পষ্টতই ক্ষোভ রয়েছে। এটাও সত্য যে বিরোধীরা ক্ষোভ থেকে রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করছে… এটাও সত্য যে পুলিশের দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল… দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে এই গোটা ঘটনায়।’
  • নোডার বিধায়ক সাহিনা মমতাজ খান আবার দাবি করেছেন, সব কিছু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কান পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে না। তবে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই দিদির সঙ্গে আছে। তবে ব্যক্তিগত ভাবে আমি পুলিশের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নই। মেয়েরা কি কাজে যাবেন না? আমার এলাকাতেই মহিলারা ক্ষুব্ধ।’
  • এদিকে মোথাবাড়ির বিধায়ক সাবিনা ইয়াসামিন বলেন, ‘এটা ভয়াবহ একটা ঘটনা। এটা স্পষ্ট যে লোকেরা, বিশেষ করে মহিলা এবং মেয়েরা ক্ষুব্ধ। আমি এই প্রতিবাদকে সমর্থন করি। উন্নাও এবং হাতরাস সহ মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য আমাদের অনেক আগেই রাস্তায় নামা উচিত ছিল – শুধু রাজ্যেই নয়, দেশ জুড়ে। আমি বলব, কিছু (পুলিশ) কর্মকর্তার অনেক আগেই শাস্তি হওয়া উচিত ছিল। এটা সত্য যে দুর্নীতি আছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চলে গেলে কি দুর্নীতির অবসান হবে বলে মনে করেন?’
  • দাসপুরের বিধায়ক মামা ভুইঞা বলেন, ‘আমার গ্রামীণ নির্বাচনী এলাকায় বিক্ষোভকারীরা একটি থানা ঘেরাও করেছে। আমরা দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে দুটি ব্লকে সমাবেশ করেছি… আমরা জনগণের কাছে, মহিলাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছি, তাদের বলছি যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অপরাজিতা বিল (নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য) এনেছেন।’
  • রানিয়ার বিধায়ক শম্পা ধারা বলেন, ‘একটি স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ হিসাবে যা শুরু হয়েছিল তা বিরোধীদের দখলে চলে যাচ্ছে। যাইহোক, এই ঘটনা লজ্জাজনক এবং ভয়ঙ্কর। দলের নির্দেশে আমার নির্বাচনী এলাকার দুই ব্লকে সমাবেশ ও জনসভা করেছি। তবে, কলকাতা পুলিশের (পরিস্থিতি সামলানো) যে ভুল ছিল তা সবাইকে মেনে নিতে হবে। তাদের স্বচ্ছ হওয়া উচিত ছিল।’
  • মিনাখাঁর বিধায়ক ঊষা রানি মণ্ডল বলেন, ‘নির্যাতিতা শিক্ষিত ছিলেন। কেউ কি এমন কিছু কোনওদিন কল্পনা করতে পেরেছিল? এই ঘটনায় সারা বাংলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দিদি নিজেই মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছেন। এটা শুধু কলকাতার সমস্যা নয়। এই ঘটনা আমার নির্বাচনী এলাকাকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। মানুষ হতবাক ও ভীত। তবে এটা স্বীকার করতে হবে যে আমাদের দল বাম শাসনামলের মতো করেনি। তারা নাগরিকদের তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করার অনুমতি দিয়েছে।’
  • এদিকে মানিকতলার বিধায়ক তথা মমতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সুপ্তী পাণ্ডে বলেন, ‘কলকাতা আগে কখনও এমন প্রতিবাদ দেখেনি, মানুষের মধ্যে এক বিশাল অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। মানুষও বুঝতে পারে যে সমস্যাটি অপ্রয়োজনীয়ভাবে দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে… প্রথম দিন থেকে মুখ্যমন্ত্রী বিচার চেয়েছিলেন। কিন্তু স্পষ্টতই কোথাও কিছু একটা ভুল হয়েছে। কোথাও কেউ ধাক্কা খেয়েছে। (প্রাক্তন আরজি কর অধ্যক্ষ) সন্দীপ ঘোষ এবং তার মতো মানুষ খুব একটা ভালো উদাহরণ নয়।’
  • নোয়াপাড়ার বিধায়ক মঞ্জু বসু বলেন, ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও দুঃখজনক এই ঘটনা। এতদিন পেরিয়ে গেলেও তদন্তে সুনির্দিষ্ট কিছু উঠে আসেনি। আমরা সবাই ন্যায়বিচার দেখতে চাই এবং জড়িতদের শাস্তি পেতে দেখতে চাই।’
  • অপরদিকে বৈষ্ণবনগরের বিধায়ক চন্দনা সরকার বলেন, ‘আমার এলাকাটা গ্রামীণ এলাকা। এখানে মানুষ মোমবাতি মিছিল করার জন্য কমই সময় পায়। কিন্তু এই ঘটনা রাজ্য জুড়ে সবাইকে প্রভাবিত করেছে… দিদি সংবেদনশীল… (মহিলা) বিধায়করা একটি বিশ্রী পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন।’
  • ধানিয়াখালির বিধায়ক অসীমা পাত্র বলেন, ‘এটা একটা জঘন্য অপরাধ, সবাই ভুক্তভোগীর বিচার চায়…প্রথম দিকে প্রতিবাদ স্বতঃস্ফূর্ত ছিল। কিন্তু এখন মানুষ (আমার নির্বাচনী এলাকায়) এই প্রতিবাদ পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে।’
  • হাওড়া দক্ষিণের বিধায়ক নন্দিতা চৌধুরী বলেন, ‘আমি একসময় পশ্চিমবঙ্গ নারী কমিশনের সদস্য ছিলাম। আমি জানি নারীর বিরুদ্ধে কি অপরাধ সংঘটিত হয় এবং কিভাবে হয়। কাউকে কাউকে আমরা সাহায্য করতে পারি, অন্যদের আমরা পারিনি… একজন মানুষ একা কিছুই পরিবর্তন করতে পারে না। পরিস্থিতি বদলাতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে…’
  • সোনারপুর উত্তরের বিধায়ক ফেরদৌসী বেগম বলেন, ‘যারা প্রতিবাদ করছেন তারা সিপিআই(এম) বা বিজেপির। সাধারণ মানুষ দিদিকে ভালোবাসে এবং তিনি যা বলছেন তাই শুনছে। রাজ্য সরকার যা করা দরকার তা করেছে।’
  • মানিকচকের বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র বলেন, ‘এই ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অগ্রহণযোগ্য। আমাদের এলাকায় যারা প্রতিবাদ করছে তারা অরাজনৈতিক এবং মন থেকেই তা করছে। তদন্ত কেন এগোচ্ছে না তার জবাব দিতে হবে সিবিআইকে। আমরা চিকিৎসকদের আন্দোলন নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ আমার নির্বাচনী এলাকায় অধিকাংশই দরিদ্র এবং সরকারি হাসপাতালই তাদের একমাত্র বিকল্প।’
  • চৌরঙ্গীর বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আরজি কর ঘটনাটি লজ্জাজনক। মুখ্যমন্ত্রী যা করা দরকার তাই করেছেন। আমরা সবাই দোষীদের ফাঁসির দাবি জানাই। কিন্তু চিকিৎসকদের এবার কাজে ফিরতেই হবে।’
  • কেশপুরের বিধায়ক শিউলি সাহা বলেন, ‘আমার স্বামী ও ছেলে ডাক্তার এবং আমি এতটুকু বলতে পারি- তাদের কাজ মানুষের সেবা করা। তাদের আগে সেটা করা উচিত তারপর প্রতিবাদ করা উচিত।’
  • চণ্ডীতলার বিধায়ক স্বাতী খন্দকার বলেন, ‘চিকিৎসকদের এখন কাজে ফিরতে হবে। একজন মা এবং একজন বিধায়ক হিসাবে, আমি বলতে পারি যে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই যখন বিচার চাইছেন এবং বিষয়টিকে সংবেদনশীলতার সাথে দেখছেন, তখন এত ব্যাপক প্রতিবাদের প্রয়োজন নেই।’
  • সাঁকরাইলের বিধায়ক প্রিয়া পাল বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকা শহর ও গ্রামাঞ্চলে মেলানো। শহরাঞ্চলে বিক্ষোভ দেখা গেলেও গ্রামে এর তেমন প্রভাব পড়েনি।’

এদিকে রিপোর্ট অনুযায়ী, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা এলাকারই এক মহিলা তৃণমূল বিধায়ক বলেন, ‘রাজ্য সরকার কিছু বড় ভুল করেছে। যেমন সন্দীপ ঘোষকে আরজি কর থেকে ন্যাশনা মেডিক্যালে বদলি করা হয়েছিল। এদিকে কলকাতা পুলিশ কমিশনার ১৪ তারিখের রাতে যে মন্তব্য করেছিলেন, সেটাও মানুষ ভালো ভাবে নেয়নি।’ এদিকে উত্তরবঙ্গের অপর এক মহিলা বিধায়ক বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিশ্বাস করলেও দলের কিছু নেতার দাদাগিরি দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *