হুগলির ত্রিবেণীতে শুরু হল কুম্ভ মেলা। প্রতি বছর মাঘ মাসের সংক্রান্তিতে এই মেলার আয়োজন করে একাধিক সনাতনী সংগঠন। বুধবার ভূমিপূজা ও ধ্বজ উত্তলোনের মাধ্যমে কুম্ভ মেলার সূচনা হয়। আয়োজকদের দাবি, ৭০০ বছর আগে এখানে বসত কুম্ভ মেলা। গত বছর মেলার অনুমতি পুলিশের সঙ্গে আয়োজকদের দড়ি টানাটানি আদালতে পৌঁছলেও এবার মেলার অনুমতি পেতে তেমন সমস্যা হয়নি।
কানাডিয়ান লেখক এলান মরিনিসের একটি বই থেকে ত্রিবেনী কুম্ভের কথা জানা যায়। এছাড়াও পুরানে ত্রিবেনীর নাম পাওয়া গিএছে। স্কন্দপুরান অনুসারে কুশদ্বীপের রাজা প্রিয়বন্র মোট সাতজন পুত্র ছিলেন। তারা হলেন অগ্নিত্র, মেধাতিথি, বপুষ্মান, জ্যোতিষ্মান, দ্যূতিষ্মান, সবন ও ভব্য। ত্রিবেণী ধাম সংলগ্ন এই স্থানে তারা সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। সংলগ্ন সাতটি গ্রামে। যেগুলি হল, বাসুদেবপুর, বাঁশবেড়িয়া, নিত্যানন্দপুর, কৃষ্ণপুর, দেবানন্দপুর, শিবপুর ও বলদঘাটিতে তাঁদের আশ্রম তৈরী করেছিলেন। তাই এর নাম হয় সপ্তগ্রাম। সেই সপ্তগ্রাম বাণিজ্য বন্দর থাকাকালীন এই স্থানের জনপ্রিয়তা বাড়ে। যদিও পরবর্তী কালে বিদেশি আক্রমণে এর মাহাত্ম্য কমে যায়। কিন্তু মাঘ সংক্রান্তিতে বহু মানুষ ত্রিবেণীতে স্নান করেন।সেই সূত্র ধরে ত্রিবেণী অনু কুম্ভের জন্ম হয়েছে। মেলা কমিটির চিফ পেট্রন কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ত্রিবেণীতে একদিনের কুম্ভ মহোৎসব হবে। আগামী দিনে বড় আকারে কুম্ভের আয়োজন হবে।’
বরানগর আমলবাজার মঠের স্বামী সারদাত্মানন্দ বলেন, ‘ত্রিবেণী প্রাচীন তীর্থক্ষেত্র। পরাধীনতার গ্লানিতে তার স্বকীয়তা হারিয়েছিলাম আমরা। সেটা পুনরুদ্ধার এবং পুনর্জাগরণ করার জন্য গত তিন বছরের মতো এবছরও কুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ১১ – ১৩ ফেব্রুয়ারি হবে সেই মেলা। সাধুসন্তরা আসবেন। বহু মানুষের উপস্থিতি হবে। আমরা চাইছি এই মেলাকে হেরিটেজ রূপ দিতে।’
আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়ার্ধে মেলায় ভিড় জমাবে সাধু সন্তরা। নাগা সাধু থেকে দেশ বিদেশের সাধুরা উপস্থিত থাকবেন। হোম কুণ্ডে যজ্ঞ এবং ধর্ম সম্মেলন হবে। পরদিন নগর কীর্তনের পর হবে অমৃত স্নান। ভান্ডারা দেওয়া হবে সাধুসন্তদের। হবে ধর্ম আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
১০ ফেব্রুয়ারী থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু। সেই সময় কুম্ভ মেলা হওয়ায় পরীক্ষার্থীদের যাতে অসুবিধা না হয় তার জন্য মেলার চার পাশে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে পাঁচটি স্কুলে পরীক্ষার কেন্দ্র করা হচ্ছে না। গতবছর মেলার অনুমতি নিয়ে টালবাহানা হয়েছিল মাধ্যমিক পরীক্ষা থাকায়। এবার প্রশাসনও আগে থেকেই তৎপর।
প্রয়াগে যে ঘটনা ঘটেছে তার জন্য। গতকালই জেলা শাসক দপ্তরে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়।সেখানে মন্ত্রী বিধায়ক পুলিশ সুপার থেকে জেলা প্রশাসনের আধিকারীকরা উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী বেচারাম মান্না জানান, প্রয়াগের অভিজ্ঞতা থেকে ত্রিবেণী কুম্ভের জন্য সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে। পুণ্যার্থীরা যাতে নিরাপদে আসতে যেতে পারেন তার দিকে নজর দেওয়া হবে।