ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল নিয়ে গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি) বৈঠক বয়কট করলেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। তাঁদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কমিটি পথভ্রষ্টের মতো আচরণ করছে।
সোমবার এই বৈঠক ডাকা হয়েছিল। অশান্তির সূত্রপাত হয় সেখানেই। বলা হচ্ছে, বৈঠকে একটি বিশেষ উপস্থাপনা করেন কর্ণাটক রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশন এবং কর্ণাটক সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিগমের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আনওয়ার মণিপড্ডি।
বিরোধীদের বক্তব্য, এই উপস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংশোধিত বিলের কোনও সম্পর্ক নেই। বস্তুত, মূল আলোচনা থেকে কমিটির সদস্যদের নজর ঘোরাতেই ওই উপস্থাপনা করা হয় বলে অভিযোগ তুলে বৈঠক বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন বিরোধী সাংসদরা।
কমিটির বিরোধী সাংসদরা জানিয়েছেন, আনওয়ার মণিপড্ডি যে উপস্থাপনা এদিনের বৈঠকে করেছেন, তাতে কর্ণাটক সরকার এবং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের বিরুদ্ধে এমন কিছু অভিযোগ তোলা হয়েছে, যার কোনও যুক্তি নেই।
সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এই উপস্থাপনার পর বিরোধী সাংসদরা বলেন, সংশ্লিষ্ট উপস্থাপনার সঙ্গে সোমবারের বৈঠকের বিষয়বস্তর কোনও সম্পর্ক নেই।
শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী) সাংসদ অরবিন্দ সাওয়ান্ত এই উপস্থাপনার সমালোচনা করেন এবং বলেন, ‘আমরা বৈঠক বয়কট করেছি। কারণ, এই কমিটি তার আদর্শ ও নীতি মেনে কাজ করছে না। নৈতিকভাবে এবং আদর্শগতভাবে তারা ভুল করছে।’
বিষয়টি নিয়ে লোকসভার অধ্যক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কমিটির বিরোধী সাংসদ-সদস্যরা। তাঁরা ঠিক করছেন, ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল নিয়ে গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটি যে ঠিক মতো কাজ করছে না, সেই বিষয়ে তাঁরা লোকসভার অধ্যক্ষের কাছে নিজেদের অভিযোগ জানাবেন এবং এই বিষয়ে একটি প্রস্তাব পেশ করবেন।
উল্লেখ্য, গত ৮ অগাস্ট প্রাথমিকভাবে লোকসভায় ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল পেশ করা হয়। তারপর সেটি পর্যায়ক্রমে আলোচনার জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়।
সংশ্লিষ্ট কমিটির কাজ হল, পেশ করা বিলে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার জন্য প্রস্তাব পেশ করা। তার জন্য সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। যে প্রক্রিয়া গত ১ অক্টোবর শেষ হয়।
এই সমস্ত আলোচনার উদ্দেশ্য হল, বিলের প্রস্তাবিত ধারাগুলিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সংশোধনীর প্রস্তাব দেওয়া। যার মধ্যে রয়েছে – ডিজিটাইজেশন, আরও কঠোর অডিট ব্যবস্থা, স্বচ্ছতা এবং বেআইনিভাবে দখল করা ওয়াকফ সম্পত্তিগুলি পুনরুদ্ধার করার জন্য নির্দিষ্টি আইনি ব্যবস্থাপনা।
উল্লেখ্য, ওয়াকফ আইন প্রাথমিকভাবে তৈরি করা হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। যার উদ্দেশ্য ছিল, সারা ভারতে ছড়িয়ে থাকা ৬০ হাজারেরও বেশি নথিভুক্ত ওয়াকফ পরিচালন ব্যবস্থার উপর নজরদারি চালানো।
কিন্তু, সেই আইনে বেশ কিছু সমস্যা ছিল। সেই সমস্যাগুলির সমাধান করার উদ্দেশ্যেই ২০২৪ সালে এই সংশোধনী বিল পেশ করা হয়।