সংসদের লোকসভা এবং রাজ্যসভায় ইতিমধ্যেই পাশ হয়ে গিয়েছে ওয়াকফ সংশোধনী বিল। রাজ্যসভায় বিলটি নিয়ে আলোচনার সময় কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী বলেছিলেন, ‘বিলটি বুলডোজ করা হয়েছে’। সেই মন্তব্য নিয়ে অবশ্য বিজেপির আপত্তি ছিল। তবে বিল বুলডোজ করা হয়ে থাকুক কি না থাকুক, পথে নেমে এই বিলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মুসলিম সমাজের একাংশ এবং বিরোধীরা। এরই সঙ্গে সরকারের জন্যে ‘স্পিডব্রেকার’ তৈরি করছেন বিরোধীরা। ইতিমধ্যেই এআইএমআইএম প্রধান তথা হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি মামলা করেছেন সুপ্রিম কোর্টে। আর এবার ওয়াকফ সংশোধনীর বিরুদ্ধে মামলা করলেন আপ বিধায়ক আমানাতুল্লাহ খান। তিনি বলেন, ‘এই বিলটি মুসলমানদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্বায়ত্তশাসনকে খর্ব করছে। নির্বিচারে নির্বাহী হস্তক্ষেপকে সক্ষম করবে এই বিল। এতে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে।’
এর আগে গত শুক্রবার কংগ্রেস জানিয়েছিল, শীঘ্রই ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৪-এর সাংবিধানিকতাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করবে। এদিকে এর আগে এই ওয়াকফ সংশোধনীর বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে মামলা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ডিএমকে। আর আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে জয়রাম রমেশ লিখেছিলেন, ‘কংগ্রেস খুব শীঘ্রই ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৪-এর সাংবিধানিকতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানাবে। আমরা আত্মবিশ্বাসী এবং ভারতের সংবিধানে থাকা নীতি, বিধান এবং অনুশীলনের উপর মোদী সরকারের সমস্ত আক্রমণ প্রতিহত করব।’
প্রসঙ্গত, লোকসভার এবং রাজ্যসভাতে পাশ হয়েছে ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল। রাজ্যসভায় এই বিলটি পাশ করাতে বিজেপির প্রয়োজন ছিল ১১৯টি ভোটের। তারা সেই সংখ্যা থেকে বেশ কিছুটা বেশি ভোটই পায়। ৩৩ ভোটের ব্যবধানে বিলটি পাশ হয় সংসদের উচ্চকক্ষে। এর পক্ষে পড়েছিল ১২৮টি ভোট, বিপক্ষে পড়ে ৯৫টি ভোট। এর আগে লোকসভায় এই বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ২৮৮ জন সাংসদ, বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ২৩২ জন সাংসদ।
উল্লেখ্য, ওয়াকফের অধীনে ভারতে মোট ৮.৭ লক্ষ সম্পত্তি আছে। ৯.৪ লক্ষ একর জমি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে ওয়াকফ। যার আনুমানিক মূল্য ১.২ লক্ষ কোটি টাকা। দেশে সবচেয়ে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি আছে উত্তরপ্রদেশে (২,৩২,৫৪৭, দেশের মোট ওয়াকফ সম্পত্তির ২৭ শতাংশ)। তারপরই তালিকায় আছে পশ্চিমবঙ্গ। রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে মোট ৮০ হাজার ৫৪৮টি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। বাংলায় ওয়াকফ সম্পত্তির ওপরে রয়েছে ১৫৮টি স্কুল, ৪টি মডেল ইংলিশ মিডিয়াম মাদ্রাসা, ১৯টি মুসলিম হস্টেল, ৯টি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বীরভূমে ওয়াকফের জমির ওপরে রয়েছে একটি শপিং কমপ্লেক্সও। তবে এত সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও ভারতে ওয়াকফের বার্ষিক আয় নাকি মাত্র ১৬৩ কোটি টাকা। এই আবহে বিজেপি ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনায় গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে। এই আবহে ওয়াকফ পরিচালনায় স্বচ্ছতা আনতেই নাকি এই সংশোধনী বিল আনা হয়েছিল।