শুক্রবার (১১ এপ্রিল, ২০২৫) যখন মুর্শিদাবাদে সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে আন্দোলন চলছে, তখন কেন সেই প্রতিবাদীদের উপর গুলি চালালেন পুলিশকর্মীরা? শনিবার (১২ এপ্রিল, ২০২৫) এই প্রশ্নের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিলেন রাজ্য পুলিশের এডিজি আইন-শৃঙ্খলা জাভেদ শামিম। তিনি স্বীকার করলেন যে পুলিশকর্মীদের ওই দিন, ওই মুহূর্তে চার রাউন্ড গুলি চালাতে হয়েছিল। কিন্তু, কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা একান্ত বাধ্য হয়েই সেই কাজ করেছিলেন। এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিল আমজনতার নিরাপত্তা ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষার প্রশ্ন।
শনিবার আয়োজিত একটি সাংবাদিক সম্মেলনে জাভেদ শামিমকে সংশ্লিষ্ট ঘটনা প্রসঙ্গে বলতে শোনা যায়, ‘বাধ্য হয়েই চার রাউন্ড গুলি চালিয়েছিল পুলিশ।’ এরপরই তিনি ঘটনার বিস্তারিত ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। জানান, ‘সুতিতে সুজার মোড়, সামশেরগঞ্জে ডাক বাংলো মোড়ে অশান্তি হয়েছে। রাস্তা অবরোধ হয়, পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। তারপরই পুলিশের উপর আক্রমণ করা হয়। পুলিশ অনেকক্ষণ থেকে সংযত ছিল। মিনিমাম থেকে ম্যাক্সিমাম ফোর্স প্রয়োগ করা হয়। লাঠি, (কাঁদানে) গ্যাস সবরকম চালানো হয়। কিন্তু, জনতা আরও হিংসাত্মক হয়ে ওঠে।’
উল্লেখ্য, শুক্রবার দুপুর থেকেই ওয়াকফ-প্রতিবাদের নামে একদল মানুষ কার্যত তাণ্ডব শুরু করে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ, সুতিতে। তারও আগে একই ইস্য়ুতে অশান্তি ছড়িয়েছিল জঙ্গিপুরে। তারপর পুলিশ সতর্ক থাকলেও হিংসার আগুন ছড়ানোর আগে তা রোখা যায়নি।
পুলিশ সূত্রে আগেই সামনে এসেছিল, প্রবল হামলা, ইটবৃষ্টির মুখে, কার্যত প্রাণ বাঁচাতেই পালটা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন সেখানে মোতায়েন থাকা পুলিশকর্মীরা। তাঁদের ছোড়া গুলিতে পরবর্তীতে দু’জনের আহত হওয়ার খবর সামনে আসে। আহতদের মধ্যে এক কিশোরও ছিল বলে দাবি করা হয়। কিন্তু, কোন অবস্থায় পুলিশ এভাবে গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়েছিল, তা নিয়ে যাতে কোনও বিভ্রান্তি না ছড়ায়, এদিন সেটাই নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছেন জাভেদ শামিম।
তিনি আরও বলেন, ‘পাবলিক বাস থেকে সরকারি সম্পত্তি, সবকিছুতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তিন ঘণ্টা এরকম চলার পর মানুষের প্রাণ বাঁচাতে সুজার মোড়ে পুলিশ বাধ্য হয়ে চার রাউন্ড ফায়ারিং করে। তাতে দু’জনের আহত হওয়ার খবর আছে আমাদের কাছে। তাঁরা হাসপাতালে আছেন। ভালো আছেন এখন।’
প্রসঙ্গত, সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে রাজ্য়ের নানা প্রান্তেই আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু, মুর্শিদাবাদ জেলার নানা জায়গা এর জেরে কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশের বিরাট বাহিনী মোতায়েন করার পাশাপাশি বিএসএফ-কেও রাস্তায় নামানো হয়েছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার নিজে জানিয়েছেন, প্রতিবাদের নামে কোনও গুন্ডামি বরদাস্ত করা হবে না।
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়-সহ রাজ্যের শাসকদলের নেতারা শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার বার্তা দিচ্ছেন। গুজবে কান দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সুর জাভেদ শামিমের গলাতেও শোনা গিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ‘ভয়ঙ্করভাবে গুজব ছড়াতে থাকে। ভুল বোঝানো হচ্ছে। দুষ্কৃতী, সমাজবিরোধীরাই এটা করছে।’