ওয়াকফ সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে গতকাল মুর্শিদাবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শন হয়েছিল বহু জায়গায়। সেই বিক্ষোভ হিংসায় পরিণত হয়। তবে আজ পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এই আবহে বার্তাসংস্থা এএনআই-কে এক দোকানদার জানান, গতকালকে প্রতিবাদের নামে লুটপাট চালায় বিক্ষোভকারীরা। স্থানীয় সেই দোকানদার বলেন, ‘তারা বাইক সহ অনেক কিছু ভাঙচুর করে ও আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আমার মামার দোকান ভাঙচুর করা হয়েছিল, এবং তারা দোকানের জিনিসপত্রও নিয়ে গিয়েছিল। ভয়ে আমরা সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। যখন এই সবকিছু ঘটছিল, তখন পুলিশ এখানে ছিল না। পুলিশ স্টেশনে আক্রমণ করা হয়েছিল। সেই সময় পুলিশ কর্মীরা নিজেরাই পালিয়ে যান।’
এদিকে হিংসা প্রসঙ্গে ধুলিয়ান গঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে কর্তব্যরত একজন গার্ড বলেন, ‘গতকাল দুপুর ১টার পর থেকে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ভিড় জড়ো হতে শুরু করে। উত্তেজিত জনতা পাথর ছুড়তে শুরু করে। ভাঙচুরের কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। অনেক জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যায়, এবং সিগন্যাল পাস করা সম্ভব হয় না। গভীর রাতে, আরপিএফ এবং বিএসএফ কর্মীরা আসেন, এবং তারপরে ট্রেন চলাচল পুনররায় চালু করা হয়। এর মাঝে অনেক ট্রেনের গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে, এবং অনেকগুলি দেরিতে চলছে।’
এদিকে গতকালই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিএসএফের সাহায্য চেয়েছিল জেলা প্রশাসন। এদিকে রাতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে বলে জানায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে পুলিশ এই তথ্য জানিয়েছিল। এদিকে বার্তাসংসংস্থা এএনআই-এর ভিডিয়োতে দেখা যায়, গতরাতে বিএসএফ মোতায়েন ছিল জঙ্গিপুরের বিভিন্ন জায়গায়। এমনকী আজ সকালেও বিএসএফ জওয়ানদের টহল দিতে দেখা যায় এলাকায়।
এর আগে শুক্রবার পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। রেল স্টেশন থেকে শুরু করে জাতীয় সড়ক জুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছিল ওয়াকফ প্রতিবাদীরা। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠিয়েছে বিএসএফ। অপরদিকে গুজব ছড়ালে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে পুলিশ। এদিকে বিজেপির দাবি, আমতলা থেকে মুর্শিদাবাদ, সর্বত্রই পুলিশ ‘মার খাচ্ছে’। এই আবহে সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে গেরুয়া শিবির। জানা যায়, গতকাল পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট বৃষ্টি করে বিক্ষোভকারীরা। দাবি করা হয়েছে, গতকাল পুলিশ-জনতার খণ্ডযুদ্ধে জখম ফরাক্কার এসডিপিও মনিরুল ইসলাম খান। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়। লাঠিচার্জও করে পুলিশ। এরপরে সাজুরমোড়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি বোমা বর্ষণ করে উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা। এর মাঝেও প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে পুলিশ পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করেছিল সেখানে। তবে ওয়াকফ আন্দোলনকারীদের রোষ আরও বাড়লে অনেক পুলিশকর্মীকেই প্রাণ বাঁচাতে মসজিদে আশ্রয় নিতে হয়েছিল বলে দাবি করা হয়।