অন্ধ্রপ্রদেশে বাসে মৃত্যুমিছিলের নেপথ্যে কারণ কী?

Spread the love

শুক্রবার অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুলে ঘটে গিয়েছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। লাক্সারি বাসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হন বহু। যদিও বাইকের সঙ্গে ধাক্কায় বাসে আগুন লাগে। তবে সেই আগুন বিধ্বংসী আকার ধারণ করে স্মার্টফোনের দৌলতে। কুর্নুলে বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এমনই তথ্য সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, বাসের ভিতর ২৩৪টি স্মার্টফোন মজুত ছিল, যা থেকে বিস্ফোরণ ঘটলে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।

শুক্রবার ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ কুর্নুল জেলায় ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়কে একটি বাইকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে বাসটির। এর ফলে বাসের সামনের অংশে আটকে যায় বাইকটি। ওই অবস্থাতেই চলতে থাকে বাস। সেই সময়েই দাউ দাউ করে আগুন ধরে বাসটিতে। তাতে পুড়ে মৃত্যু হয় কমপক্ষে ২০ জনের। এবার এই ঘটনার তদন্তে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। আগুনের তীব্রতার কারণ খুঁজতে গিয়ে উঠে আসছে বাসে মজুদ থাকা বিপুল পরিমাণ স্মার্টফোনের কথা। প্রশাসন এবং জনসাধারণের মধ্যে প্রশ্ন জাগছে, কীভাবে শত শত স্মার্টফোন যাত্রীবাহী গাড়ির লাগেজ কেবিনে পুড়ে ছাই হল? তদন্তে জানা গিয়েছে, আগুনের তীব্রতা বাড়িয়েছিল ২৩৪টি স্মার্টফোন। ওই ২৩৪টি ফোনের ব্যাটারি ফেটেই আগুন বিধ্বংসী হয়ে ওঠে, যা বাস এবং যাত্রীদের গ্রাস করে নেয়। ফলে প্রাণহানি বাড়তে থাকে।

হায়দরাবাদের ব্যবসায়ী মাঙ্গানাথ সেগুলি বেঙ্গালুরুতে একটি ই-কমার্স সংস্থাকে সরবরাহ করছিলেন। বেঙ্গালুরু থেকে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল ফোনগুলির। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পার্সেলে রাখা ফোনের ব্যাটারি থেকে তীব্র বিস্ফোরণ ঘটে। আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে আগুন। অন্ধ্রপ্রদেশ দমকল বিভাগের ডিজি পি বেঙ্কটরমণ জানিয়েছেন, জ্বালানি চুঁইয়েই প্রথমে আগুন ধরে বাসটিতে। বাইকটি বাসের নীচে ঢুকে যায়। পরে স্মার্টফোন বিস্ফোরণ বিপদ বাড়িয়ে দেয়। বাসের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে যে ব্যাটারি থিল, তাও ফেটে যায় বলে জানিয়েছেন তিনি। আগুনের গ্রাসে তাপমাত্রা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে বাসের মেঝেয় পাতা অ্যালুমিনিয়ামের পাত পর্যন্ত গলে যায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে যে দৃশ্য দেখেন, তা অকল্পনীয় বলেও জানিয়েছেন দমকল বিভাগের ডিজি পি বেঙ্কটরমণ। তিনি জানান, বাসের মেঝেয় হাড়, ছাই পড়েছিল। তাতেই বোঝা যায় কত বড় দুর্ঘটনা ঘটে। বাসটির কাঠামো নির্মাণেও খামতি ছিল বলে অভিযোগ তাঁর। যদিও প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল যে বাসের সামনে দিকে থাকা জ্বালানি লিকেজের কারণেই আগুন লাগে।

তবে, কুর্নুল রেঞ্জের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) অফ পুলিশ কোয়া প্রবীণ জানিয়েছেন, বাসে থাকা দুটি ১২ কেভি ব্যাটারিই আগুনের কারণ, স্মার্টফোনের চালান নয়। তিনি দাবি করেছেন স্মার্টফোন বেশিরভাগই অক্ষত ছিল। পুড়ে যাওয়া মৃতদেহগুলির ডিএনএ মিলিয়ে দেখা হচ্ছে পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য। সোমবারের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে, অন্ধ্রপ্রদেশ ফায়ার সার্ভিসেস এবং ফরেনসিক বিভাগের বিশেষজ্ঞরা একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন যা নিশ্চিত করে যে স্মার্টফোনের চালান এবং বাসের ব্যাটারি আগুন ছড়িয়ে পড়াকে ত্বরান্বিত করেছিল। উল্লেখ্য, শুক্রবার রাতে হায়দরাবাদ থেকে একটি যাত্রীবোঝাই লাক্সারি বাস বেঙ্গালুরুর দিকে রওনা দিয়েছিল। ভোররাতে কুর্নুল জেলার চিন্নেতকুর গ্রামের কাছে বেঙ্গালুরু-হায়দরাবাদ হাইওয়েতে একটি বাইকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে বাসটির। তাতে বাসটিতে আগুন ধরে যায়। নিমেষে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে গোটা বাস। বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে বাসটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বেশিরভাগ যাত্রী দরজা ভেঙে বেরিয়ে আসারও সময় পাননি। ফলে আগুনে ঝলসে মৃত্যু হয় একের পর এক অসহায় যাত্রীর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *