গ্রামীণ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর হাতে ঋণ পৌঁছে দিতে উদ্যোগী নবান্ন

Spread the love

বিধানসভা ভোটের মুখে গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও সক্রিয় করতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। নবান্নের নির্দেশে রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির (এসএইচজি) হাতে দ্রুত ঋণ পৌঁছে দিতে প্রশাসন ও বিভিন্ন ব্যাঙ্ক একযোগে কাজ শুরু করেছে। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, এই পদক্ষেপের লক্ষ্য রাজনৈতিক নয়, বরং গ্রামীণ মহিলাদের আর্থিক সক্ষমতা ও কর্মসংস্থান আরও প্রসারিত করা। তবে রাজনৈতিক মহল বলছে, এই তৎপরতা নির্বাচনের আগে শাসক দলের গ্রামীণ ভোটব্যাঙ্কের প্রতি বিশেষ মনোযোগের ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

সম্প্রতি রাজ্য সরকার ও স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স সাব-কমিটির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক বৈঠকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে দ্রুত ঋণপ্রদানের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা, জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠী বিষয়ক দফতরের কর্মকর্তারা। আলোচনায় উঠে আসে, গত এক বছরে রাজ্যের বহু জেলায় ঋণ সংযোগ কর্মসূচিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও কিছু জেলায় এখনও গতি আনতে হবে। সেই লক্ষ্যেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকেও সহজ ও দ্রুত ঋণপ্রাপ্তির আওতায় আনা হবে।

বৈঠকে আরও জানানো হয়, ঋণপ্রদান প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও ডিজিটাল করতে বিশেষ পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে, যাতে মহিলা সদস্যদের হাতে সময়মতো অর্থ পৌঁছে যায় এবং কোনও প্রকার প্রশাসনিক জটিলতা না থাকে। প্রশাসনের একাংশের মত, এই পদক্ষেপ রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে সাহায্য করবে। একই সঙ্গে মহিলাদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার পথও আরও মজবুত হবে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত শুধু আর্থিক নয়, এটি নির্বাচনী দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গত ১৪ বছরে লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বনির্ভর গোষ্ঠী প্রকল্প বা ‘মহিলাদের আর্থিক স্বাধীনতা’ এসব কর্মসূচি গ্রামীণ ভোটব্যাঙ্কে গভীর প্রভাব ফেলেছে। ভোটের কয়েক মাস আগে সেই ধারাকেই আরও জোরদার করছে নবান্নের নতুন উদ্যোগ। তাদের মতে, গ্রামীণ মহিলারা মূলত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য, ফলে এই গোষ্ঠীগুলির আর্থিক সহায়তা রাজনীতিতেও তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যদিও সরকারি সূত্রের বক্তব্য, এই প্রকল্পের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। এটি বহুদিনের চলমান একটি প্রশাসনিক কর্মসূচি, যা রাজ্যের উন্নয়নচিত্রে স্থায়ী ভূমিকা রাখে। সরকারের দাবি, এই নতুন উদ্যোগ মূলত পুরনো প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুততর ও ফলপ্রসূ করার প্রয়াস মাত্র, যাতে ব্যাঙ্ক ও প্রশাসনের সহযোগিতায় গ্রামীণ অর্থনীতির গতি আরও ত্বরান্বিত হয় এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের মহিলারাও আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হয়ে ওঠেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *