শুরুটা করেছিল পাকিস্তান। গত বৃহস্পতিবার কাবুলে এয়ারস্ট্রাইক করে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান সদস্য ও টিটিপি প্রধান নূর ওয়ালি মেহসুদকে খতম করার লক্ষ্যে নেমেছিল। কিন্তু তাতে সফল না হলেও ৩০ জন জঙ্গিকে নিকেশ করেছে বলে জানায় পাক সেনা। এবার পাল্টা পাকিস্তানে একের পর এক হামলা চালাতে শুরু করেছে আফগানিস্তান। আফগান বাহিনীর প্রতিশোধমূলক অভিযানে কমপক্ষে ৬৫ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হওয়ার দাবি করেছে তালিবান সরকার। আহত হয়েছেন আরও ৩০ জন। এমনকী তালিবান নিয়ন্ত্রিত আফগান সেনা ২৫টি পাকিস্তানি সেনার আউটপোস্ট দখল করে নিয়েছে।
রবিবার আফগান সরকারের প্রধান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ জানান, ‘কুনার ও হেলমান্দ প্রদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর ধারাবাহিক হামলার জবাবে আফগান সেনারা সফল প্রতিশোধমূলক অভিযান চালিয়েছে। এই অভিযানে আফগান বাহিনীরও প্রায় ২০ জন সদস্য হতাহত হয়েছেন। তবে আফগান বাহিনী পাকিস্তানি অস্ত্রের একটি ‘বড় অংশ’ দখল করেছে।’ তিনি আরও বলেন, সৌদি আরব এবং কাতারের হস্তক্ষেপে শনিবার মধ্যরাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ করা হয়েছে। আফগানিস্তানের সমস্ত সীমান্ত রেখায় পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং অবৈধ কার্যকলাপ অনেকাংশে প্রতিরোধ করা হয়েছে। এর আগে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র ইনায়াতুল্লাহ খোরাজমি বলেছিলেন, পাকিস্তানের ‘বারবার সীমান্ত লঙ্ঘন’ ও আফগানিস্তানের ভূখণ্ডে বিমান হামলার জবাবে আফগান বাহিনী ‘সফল প্রতিশোধমূলক অভিযান’ চালিয়েছে। অভিযানটি মধ্যরাতে শেষ হয়। তিনি এক্স পোস্টে লেখেন, ‘আমরা শত্রুর একাধিক সীমান্ত পোস্ট দখল করেছি এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি ধ্বংস করেছি।’ অন্যদিকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, তাদের বাহিনী আফগান সীমান্তের অন্তত ১৯টি পোস্ট দখল করেছে। পাকিস্তান টেলিভিশন (পিটিভি) সম্প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকায় ধোঁয়া ও আগুনের লেলিহান শিখা, এবং কুররম অঞ্চলে কয়েকজন তালিবান যোদ্ধা আত্মসমর্পণ করছে।

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি জানিয়েছেন, তালিবান ‘বিনা উসকানিতে’ এই হামলা চালায় এবং তারা বেসামরিকদের লক্ষ্য করেও গুলি চালিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘পাকিস্তান প্রতিটি ইটের জবাব দেবে এক একটি পাথর ছুড়ে। আফগানিস্তান আগুন ও রক্তের খেলা খেলছে।’ এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান-আফগান সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সৌদি আরব এবং কাতার উভয় পক্ষকে আলোচনা, কূটনীতি ও সংযমকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার কাবুলে দু’টি এবং দক্ষিণ-পূর্বের পাকতিকা প্রদেশে একটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তালিবান-শাসিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এই হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করে এবং তাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে। এরপরই আফগান সামরিক বাহিনী প্রতিশোধ নিতে আটটি সীমান্ত প্রদেশ, হেলমান্দ, কান্দাহার, জাবুল, পাকতিকা, পাকতিয়া, খোস্ত, নানগারহার এবং কুনার-বরাবর পাকিস্তানি পোস্টে হামলা শুরু করে।
আফগান সেনার তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, কাবুলে পাকিস্তানের তরফে বিমান হামলার প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে। তালিবানি শক্তিও এতে যুক্ত হয়েছে। পাক-আফগান সীমান্তের একাধিক জায়গায় চলেছে গোলাগুলি। গত সপ্তাহে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মহম্মদ আসিফ জাতীয় পরিষদে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমরা আর এটি সহ্য করব না। তাদের যারা সুবিধা দিচ্ছে, সে ঘাঁটি আমাদের মাটিতে হোক বা আফগান মাটিতে, তাদের জবাব দিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ।’ উল্লেখ্য, শনিবারই তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানে ২০ জন নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং তিন বেসামরিক নাগরিক হত্যার দায় স্বীকার করেছে।