শনিবার (১ নভেম্বর) পেশাদার টেনিস থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা করলেন ভারতীয় ক্রীড়াজগতের অন্যতম কিংবদন্তী তারকা রোহন বোপান্না। দুই দশকের কেরিয়ারে ইতি টানলেন তিনি। প্যারিস মাস্টার্স ১০০০-এ সর্বশেষ কোর্টে নেমে ছিলেন বোপান্না, যেখানে তাঁর জোড়িদার ছিল কাজাখস্তানের আলেকজান্ডার বুবলিক। সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেগঘন বিবৃতিতে অবসরের কথা ঘোষণা করেন বোপান্না। প্রথম রাউন্ডের হারের মুখ দেখে এই জুটি। তারপরই কেরিয়ারে ইতি টানার সিদ্ধান্ত ৪৫ বছর বয়সী তারকার।
বিবৃতিতে রোহন বোপান্না লিখেছেন, ‘বিদায়, তবে এটাই শেষ নয়।’ এর পরে তিনি লিখেছেন, ‘জীবনের অর্থ যে জিনিসটা খুঁজে দিয়েছে তাকে কী করে বিদায় জানাবেন আপনি? অবিস্মরণীয় ২০টা বছর কাটানোর পর … আমি আনুষ্ঠানিকভাবে আমার ব়্যাকেট নামিয়ে রাখছি। আমি যখন এটি লিখছি, আমার হৃদয় ভারী এবং কৃতজ্ঞতায় ভরা। ভারতের কুর্গের একটা ছোট শহর থেকে উঠে এসেছি। সার্ভিসের জোর বাড়াতে কাঠ কাটা, স্ট্যামিনা বাড়াতে কফির বাগানে দৌড়নো থেকে বিশ্বের সেরা কোর্টে আলোর নীচে খেলতে নামা— পুরো যাত্রাটা বিশ্বাসই হচ্ছে না।’
তিনি লিখে চলেন, ‘টেনিস আমার জন্য কেবল একটি খেলা ছিল না, এটি আমাকে উদ্দেশ্য দিয়েছে যখন আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম, যখন আমি ভেঙে পড়েছিলাম তখন শক্তি জুগিয়েছে এবং যখন গোটা বিশ্ব আমাকে সন্দেহ করেছিল তখন বিশ্বাস দিয়েছে। প্রতিবার যখন আমি কোর্টে পা রেখেছিলাম, এটি আমাকে অধ্যবসায়, উত্থানের স্থিতিস্থাপকতা শিখিয়েছিল, আবার লড়াই করতে শিখিয়েছিল যখন আমার ভিতরের সবকিছু বলেছিল যে আমি পারি না – এবং সর্বোপরি, আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে আমি কেন শুরু করেছি এবং আমি কে।’প্যারিস অলিম্পিক্সের পর ভারতের হয়ে আর টেনিস খেলেননি বোপান্না। দু বছর আগে লখনউয়ে মরক্কোর বিরুদ্ধে ম্যাচের পর আর ডেভিস কাপে খেলেননি। লি-ভূপতি পরবর্তী জমানায় ভারতীয় পুরুষ টেনিসের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র বোপান্না।

নিজের পরিবার, স্ত্রী সুপ্রিয়া, বিশেষত মেয়ে ত্রিধাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বোপান্না। তিনি লেখেন, ‘আমার চমৎকার বাবা-মাকে ধন্যবাদ- আপনারা আমার হিরো। আপনারা আমাকে সবকিছু দিয়েছেন যাতে আমি এই স্বপ্নের পিছনে ধাওয়া করতে পারি। আপনারা যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন…. আমি আপনাদের কাছে ঋণী। আমার বোন রশ্মির কাছে কৃতজ্ঞ, তুমি আমার সবচেয়ে বড় চিয়ারলিডার। তুমি সর্বদা আমার মধ্যে সেরাটি দেখেছো, এমনকি যখন আমি পারিনি। আমার পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞ – আমার নোঙ্গর হওয়ার জন্য, আমার নিরাপদ আশ্রয়স্থল হওয়ার জন্য’।
বিদায়বেলায় তিনি আরও লেখেন,‘আমার স্ত্রী সুপ্রিয়া কোর্টের বাইরে আমার সবচেয়ে বড় সঙ্গী। তুমি আমার সাথে এই যাত্রা কাটিয়েছেন, দীর্ঘ ফ্লাইট, নিদ্রাহীন রাত এবং মুহুর্তগুলি যা আমি মিস করেছি। আমি যখন আমার পৃথিবীর পিছু ধাওয়া করেছি তখন তুমি আমাদের পৃথিবীকে এত করুণার সাথে বহন করেছ। তোমার ভালবাসা, ধৈর্য এবং শক্তি আমার প্রতিটি সাফল্যের পিছনের নীরব কারণ। আমার মেয়ে ত্রিধা আমার সবকিছু দেখার ধরন বদলে দিয়েছ। সে আমাকে নতুন উদ্দেশ্য দিয়েছে, আরও শক্তি দিয়েছে।’