শনিবার এক মর্মান্তিক পদপিষ্ট ঘটনার সাক্ষী থেকেছে মাত্র ৪ মাস আগে তৈরি হওয়া অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম জেলার কাশিবুগ্গা শহরের শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী মন্দির। শনিবার কার্ত্তিক অমাবস্যা উপলক্ষে মন্দিরে উপচে পড়ে মানুষের ভিড়। যেখানে মাত্র ৩০০০ মানুষের লোকধারণ ক্ষমতা, সেখানে প্রায় ২৫০০০ মানুষের সমাগম হয়। ফল, পদপিষ্ট ও মৃত্যু। প্রাণ হারান ১০ জন ভক্ত। এই দুর্ঘটনায় ইতিমধ্যেই মন্দির কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু। এই বিতর্ক নিয়ে এবার মুখ খুললেন মন্দিরের ‘মালিক’ এবং পুরোহিত হরি মুকুন্দ পাণ্ডা।
অ্যাক্ট অব গড?
একাদশীর সকালের দুর্ঘটনা নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু বলেন, মন্দিরটি একটি ব্যক্তিগত উদ্যোগে নির্মিত। স্থানীয় প্রশাসন বা পুলিশের কাছে এই অনুষ্ঠানের জন্য কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। তাঁর দাবি, ‘অত্যন্ত দুঃখজনক যে এতজন নিরীহ মানুষের প্রাণ গেল। যদি আয়োজকরা আগে জানাতেন, তাহলে আমরা নিরাপত্তা ও ভিড় নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে পারতাম। কিন্তু সেই সমন্বয়ের অভাবেই আজ এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।’ এই আবহে টাইমস অফ ইন্ডিয়া ৯৫ বছর বয়সি ভগবান ভেঙ্কটেশ্বরের একনিষ্ঠ ভক্ত পুরোহিত হরি মুকুন্দ পাণ্ডাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘এই ঘটনার জন্য কেউ দায়ী নন। এটা ভগবানের কাজ।’ মাত্র চার বছর আগে নিজের জমিতে মন্দিরটি তৈরি করেন তিনি। স্থানীয় মানুষ এটিকে ভালোবেসে ডাকতেন ‘চিন্না তিরুপতি’ বা ‘মিনি তিরুপতি।’ এখনও মন্দিরের নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। কিন্তু একাদশীর দিন বিশেষ পুজোর জন্য সকাল থেকেই হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমাতে থাকেন। সকাল ৯টার দিকে মন্দিরের একমাত্র সরু দরজায় ঠেলাঠেলি শুরু হয়, আর তাতেই ঘটে যায় ভয়াবহ পদপিষ্টের ঘটনা।

হরি মুকুন্দ পাণ্ডা আরও বলেন, ‘প্রতিদিন ভক্তরা আসেন। দর্শন করেন এবং চলে যান। আমি ভেবেছিলাম আজও একই রকম হবে। প্রতিদিনই মন্দিরে ৩ থেকে ৪ হাজার ভক্ত আসেন। তাঁরা আসে, দর্শন করে, প্রসাদ খায়, তারপর চলে যায়। কিন্তু শনিবার সকালেই ভিড় হঠাৎ বেড়ে যায়। রান্না করা প্রসাদ শেষ হয়ে যায়, নতুন কিছু তৈরি করার সময়ও পাইনি। কিন্তু হঠাৎ করে প্রচুর মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। তাঁরা দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। আমি সবাইকে সাবধানে দর্শন করার আর্জি জানাচ্ছিলাম। তাঁদের তো কেউ বারণ করেনি, পুলিশও না।’ জানা গিয়েছে, ওড়িশার একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য হরি মুকুন্দ পাণ্ডা তিরুমালা শ্রিভারি মন্দির দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে কাশিবুগ্গা শহরে শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী মন্দির নির্মাণ করেন। যাতে তাঁর খরচ হয়েছিল প্রায় ১০ কোটি টাকা। কাশিবুগ্গায় তাঁর নামে ৫০ একর জমি আছে, যার ১২ একর জায়গায় তিনি ওই মন্দির নির্মাণ করেছেন বলে জানা গিয়েছে।